বৃহস্পতিবার, ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে আলোচনায় ‘আদিবাসী’

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:১০ অপরাহ্ন, ১৫ই জানুয়ারী ২০২৫

#

চলমান ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি যোগ হলে এ নিয়ে নতুন করে ‘তর্ক-বিতর্ক’ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ওই গ্রাফিতি পরে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে তর্ক থামছে না। এনসিটিবি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’ (পিসিপি) ও ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’ (এইচডব্লিউএফ)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা ও না করার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন।

নতুন শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছিল। ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির’ ব্যানারে  শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শব্দটি নিয়ে আপত্তি জানায়। তাদের ভাষ্য, ‘সংবিধানে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তাই সংবিধান অনুযায়ী আদিবাসী ব্যবহারের সুযোগ নেই। সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে।’ পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী শব্দটি বাতিলসহ কয়েকটি দাবিতে সংগঠনটি ঢাকার  মতিঝিলে এনসিটিবি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। তাদের আপত্তি ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবি আদিবাসী শব্দযুক্ত ওই গ্রাফিতি ১২ই জানুয়ারি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত  নেয়।

ইতিমধ্যে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের অনলাইন ভার্সন বা পিডিএফে আগের সেই গ্রাফিতি বাদ দিয়ে নতুন একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, ওই বইয়ে আদিবাসী শব্দটি যুক্ত থাকা গ্রাফিতি পরিবর্তন করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার লাইন ‘বল বীর/ চির উন্নত/ মম শির’ লেখা নতুন গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে। ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা সংগঠন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সরেকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ২৩(ক) ধারায় সংস্কৃতি সংক্রান্ত নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজিত হয়। এতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ এরপর থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে আদিবাসীর পরিবর্তে সরকারি পর্যায়ে উপজাতি শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়। ২০২২ সালের ১৯শে জুলাই ওই বছরের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ (৯ই আগস্ট) সামনে রেখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশ দেয়। এতে সংবিধান অনুযায়ী ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে ও সংবাদমাধ্যমে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী শব্দ ব্যবহারের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।

'আদিবাসী' শব্দ ব্যবহার না করতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে তখন দেশের ৫০ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দেন। বিবৃতিদাতাদের একজন হচ্ছেন মানবাধিকার নেত্রী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারে আইনগত কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।’

জানা গেছে, ডা. দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০১১ সালে ঢাকায় আয়োজিত বিদেশি কূটনীতিকদের এক অনুষ্ঠানে তিনি আহবান জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর’ জনগণকে যেন ‘আদিবাসী’ বলা না হয়।  ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিতেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষ্যিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ২৮(ক) ধারায় একাধিকবার আদিবাসী শব্দটি স্পষ্ট করে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ।

এমনকি ২০০৯ সালে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাণীতে ‘আদিবাসীদের নিজস্ব পরিচয়ে সকল অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ’ করা হয়। এ বিষয়ে চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কোনো নেতার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। গত ৫ই আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকে কারাগারে, আত্মগোপনে, না হয় বিদেশে পালিয়ে আছেন।

শান্তনু/ আই.কে.জে/


আদিবাসী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন