ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোয়াড গত ২৪ মে সিডনিতে তাদের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চতুর্থ বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ওয়াশিংটনের চলমান ঋণসীমা সংকটের মধ্যে এ বৈঠক বাতিল করতে বাধ্য হয় তারা।
তবে ২০ মে, জাপানের হিরোশিমাতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে মিলিত হয় এই কোয়াড। চলমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপায় খুঁজে তারা এই বৈঠকে।
এই দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে তর্ক বিতর্কের মাঝেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এই কোয়াডের গুরুত্ব নিয়েও সমালোচনা উঠে।
এ বিষয়ে এক পক্ষের যুক্তি হলো চীনের আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেই কোয়াডের গঠন। অপর এক পক্ষের দাবি জনসাধারণের পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সমৃদ্ধির বাহন এটি৷ তবে অন্য অনেকেই কোয়াডের উদ্দেশ্যকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান নেশনস, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ ফোরাম এবং ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের মতো অন্যান্য আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর সাথে মেলাতে পারে না।
মূলত কোয়াড কৌশলগত বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য রক্ষার চেয়েও বেশি কাজ করছে। এটি জনসাধারণের পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সমৃদ্ধি আনয়ন করছে, অপরদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করছে।
কোয়াডের মূল লক্ষ্য মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিতকরণ। ২০০৪ সালের সুনামি এবং কোভিড-১৯ মহামারী দেখায় যে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য কোয়াডের নিরাপত্তা এবং জনসাধারণ উভয়দিকেই নজর দিতে হবে।
এমন নয় যে কোয়াডের কোনও ত্রুটি নেই। তবে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও কোয়াড ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা প্রদান করছে। চারটি দেশ নিয়ে গঠিত এই কোয়াড এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার বিষয়ে একমত। এই দেশগুলোর সমৃদ্ধি, শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নের ক্ষমতা রয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কারণে, এই দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্যের বিষয়ও দৃশ্যমান।
কোয়াড অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর বৃদ্ধি চায় এবং সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করার মনোভাবও ধারণ করে। আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে কোয়াড অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পুনর্গঠনের পর, ২০২১ সালে ভ্যাকসিন, অবকাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন, সমালোচনামূলক এবং উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগকালীন ত্রাণ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেয় কোয়াড। চলতি বছরে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো এবং ডিজিটাল সংযোগ এই দুইটি বিষয়েও দৃষ্টি নিবন্ধ করেছে কোয়াড। কোয়াড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফেলোশিপ প্রোগ্রাম এবং কোয়াড পার্টনারশিপ ফর ক্যাবল কানেক্টিভিটি এবং রিসাইলেন্স উদ্যোগ দুইটি পণ্য সরবরাহের দিকে মনোনিবেশ করেছে।
নৌ মহড়ার মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নৌবাহিনীকে উন্নত করার চেষ্টাও চালাচ্ছে কোয়াড। এই উদ্যোগগুলো স্থানীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য একটি আঞ্চলিক কাঠামোর উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
কার্যকরভাবে এই পণ্যগুলো সরবরাহ করতে, কোয়াডকে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। এ চারটি দেশের জনস্বাস্থ্যের মতো অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে কী সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া কোয়াডকে অবশ্যই যৌথ কর্মসূচিতে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহী হতে হবে এবং একইসাথে আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে নিজেদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে।
বাস্তবতা হল যে কোয়াড চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকের ভূমিকা পালন করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো কোয়াডের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চারটি দেশ ইন্দো-প্যাসিফিকের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে একত্রিত হয়েছে।