ছবি: সংগৃহীত
ভিয়েতনামের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই ভিয়েতনাম যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
চলতি বছরে ভিয়েতনামের জলসীমানায় চীন তার অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি ঘটায় এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ভিয়েতনামের তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এরপরই বাইডেন ভিয়েতনামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ভিয়েতনামের উপর চীনা উৎপীড়ন এবং ভিয়েতনাম-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নের সমস্ত বিষয়গুলোর মধ্যে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে ভিয়েতনাম। জাপানি পণ্ডিত ফুকুজাওয়া ইউকিচির ১৮৮৫ সালের একটি বইয়ে তিনি জাপানকে পশ্চিমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভিয়েতনামের সাথেও এমনটিই ঘটতে চলেছে।
২০১৪ সাল থেকেই ভিয়েতনাম কি চীনাদের হাত থেকে পালাতে পারবে- এ আলোচনা ব্যাপকভাবে হয়েছে। তবে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে এবং চীনের উপর থেকে অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে ভিয়েতনামকে অবশ্যই চীনের হাত থেকে নিস্তার পেতে হবে। এক্ষেত্রে ভিয়েতনামকে সহযোগিতা করতে পারে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনামে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানই নির্ধারণ করবে এটি চীনের হাত থেকে পালাতে পারবে কি না।
১৯৭৯ সালে চীনা আগ্রাসন থামাতে সজারু কৌশল প্রয়োগ করে জয়ী হয় ভিয়েতনাম। তবে ১৯৯১ সালে চীনের বিপরীতে আর ভিয়েতনাম জয়লাভ করতে পারেনি। চীন প্রায়শই ভিয়েতনামের সীমান্ত শহর ও সামরিক স্টেশনগুলোতে ব্যাপকহারে গোলাবর্ষণ করে ভিয়েতনামকে দমিয়ে রাখে।
তবে মার্কিন-ভিয়েতনাম অংশীদারিত্ব অবশ্যই ভিয়েতনামের জন্য একটি বিকল্প পথ খুলে দিবে। তবে তা ভিয়েতনামকে চীনা আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পারবে কি না সে বিষয় এখনও অনিশ্চিত।
পূর্বে সিপিভি এর নেতৃত্বে ভিয়েতনাম ১৯৭৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মিত্রতা স্থাপনের সময় চীনের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা চালায়। মূলত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই এ চেষ্টা চালায় ভিয়েতনাম। তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে দেশটিকে আবারও চীনের সাথে যুক্ত হতে হয়।
অন্যান্য এশীয় দেশগুলো চীনের প্রভাব থেকে মুক্ত হলেও চীনের সাথে ১৪০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত ভাগ করে নেওয়ার ফলে ভিয়েতনামের জন্য এ কাজ এতোটা সহজ নয়। চীন তার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই ভিয়েতনামের উপর প্রভাব বজায় রাখতে পছন্দ করে। তবে এ প্রভাব যে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখে তা কিন্তু নয়। দেখা যায়, চীনের সাথে স্থল সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া বেশিরভাগ দেশই চীনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, বরং তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করে।
চীনের জন্য সমুদ্রের চেয়ে স্থলে বাহিনী সরানো তুলনামূলকভাবে সহজ। তাই চাইলেই জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান চীনের প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে, কারণ তারা চীনের সাথে স্থল সীমানা ভাগ করে নেয় না।
তবে চীন সবসময়ই নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য জোর জবরদস্তিকে বেছে নিয়েছে। যেমন, সান জু বলেছিলেন, "যুদ্ধ না করে শত্রুকে পরাস্ত করাই হল দক্ষতার গুণ"। তাই ভিয়েতনামকে চীনের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আগে নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। ছোট একটি শক্তি হিসেবে ভিয়েতনাম এখনও চীনকে ত্যাগ করার সামর্থ্য অর্জন করেনি, কিন্তু ভিয়েতনামকে শাস্তি প্রদানের সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে চীনের।
আর.এইচ
খবরটি শেয়ার করুন