বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর অধীনে আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রচুর অর্থ ঋণ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবে এদের ক্ষতি করেছে চীন। এ ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করাও কঠিন।
পশ্চিমা বিনিয়োগকারীরা ইস্ট আফ্রিকান ক্রুড অয়েল পাইপলাইন থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ সরিয়ে নিলে বাকি ৩০ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করতে এগিয়ে আসে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অফ চায়না (এক্সিম) এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো।
লেক আলবার্টের উগান্ডার তেলক্ষেত্র থেকে ১,৪৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২১৬,০০০ ব্যারেল সরবরাহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তানজানিয়ার ভারত মহাসাগরের টাঙ্গা বন্দরে পৌঁছানোর পর এটি বৈশ্বিক বাজারে পাঠানো হবে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ চায়না (আইসিবিসি) স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক অফ সাউথ আফ্রিকাতে ২০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডিংয়ের মালিক এবং ইএসিওপি এর আর্থিক উপদেষ্টা এবং ঋণ ব্যবস্থাকারী হিসেবে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করছে৷
এটি তিলাঙ্গা ড্রিলিং সুবিধা নির্মাণের জন্য চায়না পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে। পাইপলাইনটি নিজেই চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং সরবরাহ করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চীনা অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো ভালো ফলাফল লাভ করেনি। ঋণগ্রস্ত দেশগুলো তাদের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করার পর, চীন শেল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোকে ঋণ দিয়েছে।
ভবিষ্যতে এই বিশাল ঋণগুলো কীভাবে পরিশোধ করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, চীনের বর্তমান কার্যক্রমগুলো নিয়ে আলোচনা করাই যায়।
দেখা যায়, বহু বছর ধরে কেনিয়া চীনা হ্যাকারদের কাছ থেকে সাইবার-আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে যা মূল মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে বিআরআই অবকাঠামো প্রকল্পের ৩৫ শতাংশই দুর্নীতি কেলেঙ্কারি, শ্রম লঙ্ঘন, পরিবেশগত বিপদ এবং জনগণের প্রতিবাদে জর্জরিত। বিগত কয়েক বছর ধরে, চীন আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে পুলিশ প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করেছে এবং অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সমস্ত শাসনব্যবস্থার মধ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।
১৫ টিরও বেশি আফ্রিকান দেশে নতুন বা সংস্কার করা আফ্রিকান-থিমযুক্ত পার্লামেন্ট ভবন রয়েছে যা চীনের একজন নেতার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
ইএসিওপি প্রকল্পটি উগান্ডার ১০ জেলার ২৯৬ কিলোমিটার এবং তানজানিয়ার ২০ জেলার ১১৪৭ কিলোমিটার অতিক্রম করবে।
এই তেল ও গ্যাস কার্যক্রমের ৯৫ শতাংশ কাবওহা এবং বুগুঙ্গুর সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মধ্যে রয়েছে এবং এটি জলাশয়ের উপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
চীনের এসব কর্মকাণ্ড জলবায়ু ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। একইসাথে পাইপলাইন নির্মাণের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাও ঘটছে।
মালভূমি এবং জলাভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি ভিক্টোরিয়া হ্রদের সম্ভাব্য দূষণ আরেকটি উদ্বেগের জন্ম দেয়। মে মাসে আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী একটি প্রতিবেদনে চীনা প্রকল্পের নিন্দা জানান।
জলবায়ু দূষণের সাথে সাথে এ প্রকল্প উপজাতিদের বাস্তুচ্যুতি, অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বৃদ্ধি, মানব-বন্যপ্রাণী সংঘর্ষ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া দুইটি আফ্রিকান দেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রাও ১.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে।
আই. কে. জে/