জাপানে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে আইন আরও কঠোর করতে দেশটির বেশ কিছু দণ্ডবিধি পরিবর্তন বিবেচনাধীন ছিল ।। বিবিসি বাংলা
জাপানে যৌন হয়রানির উদ্দেশ্যে গোপনে কারো ছবি তোলা বা ভিডিও করা আইনত নিষিদ্ধ করে প্রথমবারের মত আইন চালু হচ্ছে।
এই আইন আনা হচ্ছে “অপরের যৌনক্রিয়া বা যৌনাঙ্গ দেখে যৌন তৃপ্তিলাভের” উদ্দেশ্যে যারা “আপস্কার্টিং” বা স্কার্টের নিচ থেকে গোপনে নারী অঙ্গের ছবি তোলে বা যৌনক্রিয়াার ভিডিও গোপনে রেকর্ড করে - তাদের বিরুদ্ধে।
জাপনে বর্তমানে এধরনের অপরাধের বিচার করা হয় দেশটির স্থানীয় প্রশাসনিক আইনের অধীনে- এলাকাভেদে যা ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়ে থাকে।
জাপানে যৌন অপরাধের জন্য আইনে যে ব্যাপক সংস্কার আনা হচ্ছে নতুন এই আইন তারই অংশ। নতুন আইনের অধীনে ধর্ষণের সংজ্ঞাও আরও ব্যাপক করা হবে।
বিনা অনুমতিতে কারোর যৌনাঙ্গের ছবি তোলা, সেই ছবি বিতরণ করা এবং অথবা সেই ছবি কারোর কাছে রাখা এই আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কাউকে কোনরকম যৌন উত্তেজক অবস্থায় পোজ দিতে বাধ্য করে গোপনে তার সেই অবস্থার ছবি তোলাও এই আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে।
যৌন উদ্দীপনায় 'শিশু মডেল' ব্যবহার-
এই আইনে, বিশেষ করে, শিশুদের নিয়ে “কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়া যৌনতা সম্পর্কিত” কোন ফিল্ম তোলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জাপানে শিশু মডেল – যাদের বেশিরভাগই কন্যা শিশু - তাদের ব্যবহার করে যৌন উত্তেজক ছবি নিয়মিত তোলা হয়ে থাকে। যেমন এদের কাউকে অন্তর্বাস পরে বা সাঁতারের স্বল্পবাস পরে ছবির জন্য পোজ দিতে বলা হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কখনও কখনও অ্যাথলেটদের খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত আটোসাঁটো বা খাটো পোশাক বা স্বল্পবাস পরা ছবিও যৌন উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য বা অন্য দুষ্কর্মের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নতুন আইনে অপরাধীর তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হবে বা তাকে ৩০ লাখ পর্যন্ত জাপানি মুদ্রা ইয়েন (২২ হাজার ডলার) জরিমানা করা হবে।
এবছর জুনে নতুন এই বিল সংসদে পাশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাপানে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে এধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া আইন আনার জন্য জনগণের দাবি ক্রমশ বাড়ার পর আইনে এই সংস্কার আনাা হচ্ছে।
জাপানের পুলিশ ২০২১ সালে গোপনে এধরনের ছবি তোলার জন্য পাঁচ হাজারের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করেছে - যা জাপানে এধরনের অপরাধে রেকর্ড সংখ্যক গ্রেপ্তার এবং ২০১০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেশি।
জাপানে জাতীয় বিমান চলাচল সেবাখাতের ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালিত এক জরিপে বিমান সেবিকাদের প্রতি দশজনের মধ্যে সাতজন জানিয়েছেন যে গোপনে তাদের শরীরের ছবি তোলা হয়েছে। মার্চ মাসে এই জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছে।
ইতোমধ্যেই, জাপানে বেশিরভাগ সেলফোন প্রস্তুতকারক তাদের ফোনে ছবি তোলার বোতাম এমনভাবে তৈরি করেছে যাতে শাটার চাপলেই তা আওয়াজ করবে – যাতে গোপনে কারোর ছবি তোলা না যায়।
কোন দেশে কী আইন?
অপরের যৌনক্রিয়া বা যৌনাঙ্গ দেখে যৌন তৃপ্তিলাভের জন্য গোপনে তোলা ছবির বিরুদ্ধে এশিয়ার বেশ কিছু দেশে আইন চালু আছে, কিন্তু তার প্রয়োগ সব ক্ষেত্রে হয় না।
দক্ষিণ কোরিয়ায়, গোপনে যৌন উদ্দীপক ছবি তোলার বিরুদ্ধে সাজার বিধান এক কোটি ওয়ন (৭,৫০০ ডলার) জরিমানা অথবা সর্ব্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
তবে কোরিয়ার মহিলা আইনজীবী সমিতি বলছে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এধরনের গোপনে ছবি তোলার যে ২০০০টি মামলা শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছিল, সেগুলির মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশের জেল হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে যৌন তৃপ্তি বা যৌন উত্তেজনার জন্য গোপনে ছবি তোলার দায়ে কেউ অপরাধী সাব্যস্ত হলে দু বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা, বেত্রাঘাত বা সবগুলো সাজা একত্রে দেবারও বিধান রয়েছে। দেশটিতে এই উদ্দেশ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী কারোর শরীরের ছবি তুললে বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের আইন প্রয়োগের বিধান রয়েছে, সেইসঙ্গে রয়েছে জরিমানা ও বেত্রাঘাত।
জাপানে ২০১৯ সালে ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্ত বেশ কিছু ব্যক্তিকে খালাস দেওয়ার পর গণ অসন্তোষের মুখে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে আইন কঠোর করতে দেশটির দণ্ডবিধিতে বেশ কিছু সংস্কার আনার বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছিল।
আরো পড়ুন: ‘অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বিদেশি কূটনীতিকদের ভালো নিরাপত্তা দেয়’
এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে, জাপানের বিচার মন্ত্রণালয়ের একটি প্যানেল এধরনের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি দানের বয়স ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৬ করার প্রস্তাব দেয়। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করার সময়সীমাও ১০ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৫ বছর করা প্রস্তাব করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে নাবালিকাদের যৌন কাজে সম্পৃক্ত করার বিষয়টিকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করার কথা এবং ধর্ষণের সংজ্ঞা আরও ব্যাপক করার কথাও বলা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এম এইচ ডি/ আইকেজে
নারী যৌনতা জাপান নারী অধিকার আইন শৃঙ্খলা ধর্ষণ আইন যৌন হয়রানি নাবালিকা
খবরটি শেয়ার করুন