শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৮শে চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সফল উদ্যোক্তা ক্যাট নরটনের গল্প

দৈনিক কাজ করেন ৪ ঘণ্টা, বছরে আয় ২০ লাখ ডলার

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, ৮ই জানুয়ারী ২০২৪

#

২৯ বছর বয়সী সফল উদ্যোক্তা ক্যাট নরটন। ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার অ্যারিজোনার ক্যাট নরটন মাইক্রোসফট এক্সেলের প্রশিক্ষক। বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক্সেলের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। টিকটকে ‘মিস এক্সেল’ নামে একটি চ্যানেল চালু করেন ২০২০ সালে। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে এখন তার অনুসারী ১০ লাখের বেশি। নিজের একটা ওয়েবসাইটও আছে ‘মিস-এক্সেল ডট কম’ (miss-excel.com) নামে। এই উদ্যোগ থেকে বছরে তার আয় এখন ২০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ২১ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি। 

২৯ বছর বয়সী সফল উদ্যোক্তা ক্যাট নরটনের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল? কীভাবে তিনি কাজ করেন? ও দৈনন্দিন জীবনযাপনের খুঁটিনাটি নিয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি নিজেই- 

ক্যাট নরটনের বক্তব্য: 

টিকটকে মাইক্রোসফট এক্সেল শেখানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল করপোরেট আমেরিকার বাইরে আমার প্রথম যাত্রা। আমি টিকটকে মিস এক্সেল অ্যাকাউন্টে প্রথম ভিডিওটি পোস্ট করি ২০২০ সালে। সে সময় আমি থাকতাম মা-বাবার সঙ্গে। শিক্ষার্থী কোটায় ঋণ নিয়ে ফেঁসেই গিয়েছিলাম বলা চলে! যাকে বলে ঋণের চাপে হা-হুতাশ অবস্থা। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। পেয়ে যাই এক লাখ ফলোয়ার। সে বছরের নভেম্বরে আমি আমার ওয়েবসাইটে এক্সেলের ওপর একটা কোর্স বিক্রি করতে শুরু করি। দুই মাসের মধ্যে আমার ‘প্যাসিভ ইনকাম’ (যা মূল পেশার পাশাপাশি তুলনামূলক কম পরিশ্রমের কাজ থেকে অর্জিত আয়) হয়ে যায় আমার পূর্ণকালীন চাকরি থেকে পাওয়া মাসিক বেতনের দ্বিগুণ। আমি তখন ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কাজ করতাম।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে পূর্ণকালীন উদ্যোক্তা হওয়ার আশায় আমি চাকরিটা ছেড়ে দিই। বিভিন্ন ক্যারিয়ার স্কিলের ওপর আরও আটটি কোর্স তৈরি করি। ২০২১ সালের অক্টোবরে একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলি আমি। কোর্স বিক্রি করে মাত্র এক দিনেই আমার আয় হয়ে যায় এক লাখ ডলার! এখন আমার বয়স ২৯ বছর। ‘মিস এক্সেল’ নামের উদ্যোগটি থেকে এখন আমার আয় বছরে ২০ লাখ ডলার। আমার এই উদ্যোগের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এখন আমাকে দিনে কাজ করতে হয় মাত্র চার ঘণ্টা করে। এবার জেনে নিন আমার একেকটা দিন কীভাবে কাটে।

সকালবেলা কি করেন ক্যাট?

সকালবেলা মেডিটেশনের অভ্যাস আমাকে শান্ত ও কেন্দ্রীভূত রাখে। আমি একটা ভার্চ্যুয়াল মেডিটেশন গ্রুপের সঙ্গে সকাল সাতটায় দিন শুরু করি। আমার বয়ফ্রেন্ড মাইক, আমার মা-বাবা ও মিস এক্সেলের সব সদস্য আমার সঙ্গে মেডিটেশনে যোগ দেয়।

মেডিটেশন শেষ করার পর মাইক ও আমি নাশতা বানাই। নাশতা সাধারণত করি বেক করা ওটমিল দিয়ে। তারপর বারান্দায় কফি খেতে খেতে আমরা সারা দিনের পরিকল্পনা সাজাই। এটা আমার খুব প্রিয় একটা কাজ। তারপর আমার ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক বাসায় আসেন অথবা এলাকার কোনো স্টুডিওতে আমি ‘হট ইয়োগা’ করি। তারপর মাইক ও আমি সাঁতার কাটি কিংবা বাসায় ‘সনা’ সেশন নিই।

দিনে কাজ করি ৩-৪ ঘণ্টা

আমি কাজ করি মূলত দুপুরের দিকে। বাসায়ই আমার অফিস। এখানে আছে দ্রুতগতির ওয়াইফাই এবং একটি কনটেন্ট রেকর্ডিং স্টুডিও। সব মিলিয়ে জায়গাটা রিমোট ওয়ার্কের জন্য চমৎকার। আমি নিজের কাজ এমনভাবে সাজাই, যাতে কোনো সৃষ্টিশীল কাজের মাঝখানে কোনো বিশ্লেষণধর্মী কাজের জন্য দৌড়াতে হয় না। প্রতি সোমবার আমি সৃষ্টিশীল কাজগুলো বেশি করি। যেমন লক্ষ্য স্থির করা, ব্যবসায়িক কৌশল ও কনটেন্ট আইডিয়া ঠিক করা। আমি সব সময় চিন্তা করি, আমার ব্যবসা কীভাবে আরও বড় হবে এবং কীভাবে আরও প্রভাব ফেলা যাবে।

মঙ্গলবার আমি কনটেন্টের ভিডিও চিত্র ধারণ, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট সম্পাদনা এবং আমার করপোরেট পার্টনারদের জন্য ৬০ মিনিটের একটি এক্সেল ট্রেনিংয়ের আয়োজন করি। নিজেকে ভালো রাখতে কাজের মাঝখানে বিরতি নিতে ভুল করি না আমি। এতে আমার কর্মদক্ষতা বাড়ে এবং সপ্তাহে মাত্র ১৫–২০ ঘণ্টা কাজ করা সহজ হয়ে যায়।

সন্ধ্যায় নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করি

বেলা তিনটার দিকে মাইক ও আমি গাড়ি নিয়ে আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় ঘুরে বেড়াই। প্রকৃতি আমাকে দৃঢ়, শান্ত ও সৃষ্টিশীল রাখে। তাই আমার কাছে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটানোর পর আমরা রাতের খাবার খাই। বাসায় নতুন সব পদ রান্না করতে ভালো লাগে। বাসায় রান্না না হলে এলাকার কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে যাই।

খাওয়া শেষে বই পড়ি নয়তো প্রামাণ্যচিত্র দেখি। আমার প্রিয় কিছু বিষয় হলো—মাইন্ডসেট, মেডিটেশন, এনার্জেটিকস ও কোয়ান্টাম ফিজিকস। আমরা সব সময় চেষ্টা করি রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে। যাতে পরদিন সকালে মেডিটেশন করার জন্য যথেষ্ট বিশ্রাম পাই।

আমার কাজ আমাকে স্বপ্নের মতো করে বাঁচতে শিখিয়েছে

মাইক ও আমি তখনই সবচেয়ে ভালো সময় কাটাই, যখন আমরা মিস এক্সেলের জন্য কাজ করি, আর যখন একসঙ্গে দেশের বাইরে বেড়াতে যাই। ২০২৩ সালে আমরা মোট সাতবার ভ্রমণে বেরিয়েছি। ২০২২ সালের মার্চে মিস এক্সেলের আয় দিয়ে আমার প্রথম বাড়িটি কিনেছি। আমার স্বপ্নের বাড়িটি অ্যারিজোনার সেডোনায়। সেখান থেকে দেখা যায় রেড রক মাউন্টেন। মিস এক্সেলের কারণে আমি আমার কাছের মানুষদের সহযোগিতা করতে পেরেছি।

সব সময় চেয়েছিলাম আমার মা যেন দ্রুত তার চাকরি থেকে অবসর নিতে পারেন। এ বছর আমার আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ায় মা মেডিকেল রিসেপশনিস্টের চাকরি ছেড়ে অবসর নিতে পেরেছেন।

পাঠকদের জন্য পরামর্শ

আপনি যদি মূল পেশার পাশাপাশি অন্য কোনো কাজ শুরু করার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত থাকেন, তাহলে আমি বলব, আর দেরি না করে শুরু করে দিন। শুরু করতে আপনার ভয় লাগতে পারে। কিন্তু চেষ্টা না করা পর্যন্ত আপনি কিছুই জানতে পারবেন না।

সূত্র: সিএনবিসি

এসকে/ 

মাইক্রোসফট এক্সেলের প্রশিক্ষক ক্যাট নরটন সফল উদ্যোক্তা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন