সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনকে শক্তিশালী সংকেত ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:২৪ অপরাহ্ন, ২৫শে জুন ২০২৩

#

নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের পুরোটা সময় জুড়ে চীন সম্পর্কিত কোনও কথার উল্লেখ না হলেও সূক্ষ্মভাবে চীনের জন্য একটি শক্তিশালী সংকেত পাঠানো হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা, তালেবানদের প্রতি মানবাধিকারকে সম্মান প্রদর্শন করার আহ্বান এবং মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের আহ্বানের মতো বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। কিন্তু কখনোই ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ চীনের কথা বলা হয় নি।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনই ভারতের প্রধান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে পাকিস্তানকে গড়ে তুলেছে। চীন-ভারতের সীমান্ত নিয়ে সংঘর্ষ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এই দুই জনবহুল দেশকে প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত করেছে। এই শত্রুতার জের ধরেই একত্রিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীর রাষ্ট্রীয় সফরের ঠিক আগে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেন চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে একনায়ক বলে অভিহিত করেন।

এতকিছুর পরেও পুরো সফরজুড়ে দুই নেতাই চীনকে নিয়ে কোনও আলোচনা করেন নি।

এ ব্যাপারে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, জ্যাক সুলিভান বলেন, সফরটি তো চীন সম্পর্কিত নয়। তবে সামরিক,প্রযুক্তি কিংবা অর্থনৈতিক বিষয়ে চীনের ভূমিকার বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে থাকবে। 

এ সফরের সময় বেশ কয়েকটি বড়সড় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। এর মধ্যে ভারতে জেনারেল ইলেকট্রিক ফাইটার-জেট ইঞ্জিন তৈরি এবং জেনারেল অ্যাটমিকস সশস্ত্র ড্রোন কেনার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। 

ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর একজন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ সমীর লালওয়ানি বলেন, এমন কিছু ভারত প্রায় দুই দশক ধরে চাইছিলো।

আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরে ভারতের প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন উন্নয়নের অংশীদার হতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতিবন্ধকতা দূর করা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের একটি মূল বিষয়। বাইডেন এবং সুলিভান থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন এবং উভয় দেশের কর্মকর্তারা লাইসেন্সিং, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধাগুলো কাটাতে কাজ করেছেন।

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে, আরেকটি বড় ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রোন টেকনোলজি ইনকর্পোরেটেড, যা সবচেয়ে বড় মার্কিন মেমরি চিপমেকার। এ কোম্পানি ভারতে প্রথমবারের মতো বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

বিদেশী বিনিয়োগকে প্রলুব্ধ করার জন্য, ভারত সরকার বেশ কয়েক বছর আগে ভর্তুকি দেওয়ার একটি বড় প্রোগ্রাম চালু করেছিল, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা মহামারী চলাকালীন চীনের বিকল্প অবস্থান খুঁজছিলেন। 

এদিকে, গত বছর হাউসের তৎকালীন মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপেই সফরের পর তাইওয়ানের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক পদক্ষেপ নিয়ে চীন এই অঞ্চলে একটি বিশাল ছায়া ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের কয়েকটি দেশ পরিদর্শন করেন এবং সেখানে উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন। বহুকাল ধরে এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয়েই।

পাপুয়া নিউগিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে মোদিকে গ্লোবাল সাউথের নেতা বলে প্রশংসা করেন।

মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং সামরিক অংশীদার হিসেবে ভারত যে কৌশলগত ভূমিকা পালন করতে পারে এবং চীনের বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এ ব্যাপারটি জানে।

গত এক দশকে ভারত-চীনের সম্পর্ক পালটে গিয়েছে। ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে চীন-ভারত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ২০ জন ভারতীয় প্রাণ হারান। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকে চীন সম্পর্কে ভারতীয়দের জনমত এত উন্নত নয়। ভারত টিকটকসহ ১০০ টিরও বেশি চীনা এপ ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে। 

তবে অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে চীনা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করতে চাইছেন। অনেকের মতে, শত্রুর শত্রু বন্ধু নীতি অবলম্বন করে এই দুই দেশ একত্রিত হয়েছে বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা লাভের পরেও তাইওয়ান বিষয়ক চীনা আক্রমণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত কোন প্রকার সাহায্য করবে না।

তবে চীনা সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশই একজোট হয়েছে।

আই. কে. জে/


Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন