শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরুষ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় শক্তিশালী হাতিয়ার ‘এআই’

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:২১ অপরাহ্ন, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

বিশ্বে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছে পুরুষ জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ। আশা করা যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এই সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে।

ড. স্টিফেন ভ্যাসিলেস্কুর বরাতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ভ্যাসিলেস্কু অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির (ইউটিএস) একজন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং মেডিকেল সংস্থা নিওজেনিক্স বায়োসায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি বলেন, তাদের তৈরি এআই সফটওয়্যার বন্ধ্যা পুরুষদের কাছ থেকে নেওয়া নমুনায় উচ্চ প্রশিক্ষিত যে কোনো মানুষের চেয়ে হাজার গুণ দ্রুত শুক্রাণু শনাক্ত করতে পারে।  

ভ্যাসিলেস্কু বলেন, ‘সংগ্রহ করা নমুনাতে কী দেখা যাচ্ছে মানুষের পক্ষে তা বোঝার আগেই এই এআই প্রোগ্রামটি সম্ভাব্য স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু হাইলাইট করতে পারে।’ 

ভ্যাসিলেস্কু এবং তার দল যে সিস্টেমটি তৈরি করেছেন তার নাম স্পার্মসার্চ। যে পুরুষদের বীর্যপাতের পর বীর্যে শুক্রাণুর উপস্থিতি থাকে না তাদের সহায়তা করার জন্য এই সিস্টেমটি ডিজাইন করা হয়েছে। এই অবস্থাকে বলা হয় নন-অবস্ট্রাকটিভ অ্যাজুস্পার্মিয়া (এনওএ)। বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত ১০ শতাংশ পুরুষের এ সমস্যা রয়েছে।

সাধারণত এই ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের একটি ছোট অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে পরীক্ষাগারে নেওয়া হয়। সেখানে একজন ভ্রূণবিশেষজ্ঞ নমুনায় স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু অনুসন্ধান করেন। 

ল্যাবে টিস্যুটি আলাদা করে একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করা হয়। যদি কোনও স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু পাওয়া যায় তবে সেগুলো বের করে ডিম্বাণুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

ড. ভ্যাসিলেস্কু বলেন, এই প্রক্রিয়ায় একাধিক কর্মীকে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্লান্তি এবং ভুল শুক্রাণু পর্যবেক্ষণের ঝুঁকি থেকে যায়।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যখন একজন ভ্রূণবিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপের নিচে নমুনা পরীক্ষা করেন, তখন তিনি সেখানে আকাশে ছড়ানো নক্ষত্রের মতো করে অসংখ্য কোষ দেখতে পান। 

ভ্যাসিলেস্কু আরও বলেন, এর মধ্যে রক্ত এবং টিস্যু থাকে। পুরো জিনিসটার মধ্যে মাত্র ১০টা শুক্রাণু থাকতে পারে, বাকি লাখ লাখ হয়তো অন্যান্য কোষ থাকতে পারে। এটা অনেকটা খড়ের স্তূপে সুঁই খোঁজার মতো।  

তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে স্পার্মসার্চ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেখান থেকে স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু খুঁজে পেতে পারে। আর সঙ্গে সঙ্গে এর ছবি কম্পিউটারে আপলোড করে দেয়।  

এভাবে কমপ্লেক্স টিস্যু নমুনা থেকে স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু খুঁজে পাওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে ডা. ভ্যাসিলেস্কু এবং তার টিম এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এই জাতীয় হাজার হাজার ছবি দেখিয়েছে।  

সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টিম এক প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলেছে, শুক্রাণু অনুসন্ধানের এই পরীক্ষাটি অভিজ্ঞ যেকোনো ভ্রূণ বিজ্ঞানীর চেয়ে এক হাজার গুণ দ্রুত।

তবে এই স্পার্মসার্চ এআই কোনোভাবেই ভ্রূণবিজ্ঞানীদের প্রতিস্থাপনের জন্য তৈরি করা হয়নি বরং তাদের সহায়তার জন্য তৈরি করা হয়েছে এটি।

ইউনিভার্সিটি অব ডান্ডির প্রজনন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. সারাহ মার্টিন্স দা সিলভা বলেন, শুক্রাণু খুঁজে বের করার এই গতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার কাছে এমন কেউ থাকে যিনি ডিম্বাণু সংগ্রহ করেছেন এবং ইতোমধ্যে সেই ডিম্বাণু নিষিক্ত করা দরকার, তবে সেটা করতে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় থাকে না। এ ক্ষেত্রে স্পার্মসার্চ প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।

গত চার দশকে শুক্রাণুর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার পর পুরুষের বন্ধ্যাত্বকে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।  এর কারণ হিসেবে দূষণ, ধূমপান, অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।  

এ সমস্যা থেকে পুরুষকে মুক্তি দিতে কাজ করছেন আরেক বিজ্ঞানী ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের সেন্টার ফর সিস্টেমস মডেলিং অ্যান্ড কোয়ান্টিটেটিভ বায়োমেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ড. মোরিগ গ্যালাগার। নতুন ইমেজিং সফটওয়্যার পদ্ধতি ব্যবহার করে বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যায় আক্রান্ত পুরুষদের শুক্রাণুর কার্যকারিতা ট্র্যাক করেন তিনি। 

আরও পড়ুন: প্যারাসিটামল সেবনের আগে যা জানা অবশ্যই জরুরি

এসি/ আই. কে. জে/ 


এআই পুরুষ বন্ধ্যাত্ব

খবরটি শেয়ার করুন