ছবি: সংগৃহীত
সারাবিশ্বে প্রতি আট জনে একজন মানসিক রোগী। বাংলাদেশেও মানসিক রোগীর হার একই। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শিশুদের ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগীদের ৯১ শতাংশই চিকিৎসা পায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবাসমূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইট হাউস।
সোমবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউসের আয়োজনে ও ইউএসএআইডি’র সুখী জীবন প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় জানানো হয়, প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন— পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এ অ্যান্ড আরএইচ) ডা. মনজুর হোসাইন এবং বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য সচিব ও দৈনিক আজকালের খবর’র সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার। এ ছাড়া সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান হারুন আর রশিদ। তিনি জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি জরিপ করে। ওই জরিপ অনুযায়ী, ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১৮ থেকে ২৯ বছরে বয়সীদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশ। সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
তিনি আরও জানান, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশে ২০১৯ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ব্যবস্থা চালু করে। যার লক্ষ্য হচ্ছে স্নায়ুবিক ও মানসিক রোগে আক্রান্তদের জন্য মানসম্মত পরিষেবা চালু করা। ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ কোটি মানুষের জন্য সেবার পরিধি বাড়ানো। এ কর্মসূচি গ্রহণকারী ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
হারুন আর রশিদ বলেন, ২০২০ সালে করা প্রাক-মূল্যায়ন তথ্যানুসারে বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত। কোভিড-১৯ মহামারির পর এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা বাজেটের মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিষেবাগুলোতে বরাদ্দ রয়েছে। দেশের ৯১ শতাংশ মানসিক রোগী চিকিৎসা পায় না। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো— উদ্বেগ, আতঙ্ক, সামাজিক ভয়, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, সূচিবায়ু, নির্দিষ্ট জিনিসে ভয় বা ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া এবং ঘুমের সমস্যা। এসব রোগ নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
হারুন আর রশিদ বলেন, সমস্যা থাকলেও আশার কথা হলো— সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০৩০, ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর অ্যাডলেসেন্ট হেলথ ২০১৭-২০৩০ এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্ন্তভুক্তকরণ।
ডা. মো. মনজুর হোসাইন বলেন, আগে আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন এর গুরুত্ব বাড়ছে। দিন দিন মানসিক সমস্যার সংখ্যক বাড়ছে। তবে দেশে মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশ কম। মাত্র ২৭০ জন মনোবিজ্ঞানী আছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন মানসিক রোগী আছেন, তার সঠিক তথ্য নেই। ২০১৯ সালের পর দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কোনও জরিপ হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও’র তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে আট জনের মধ্যে একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, বাংলাদেশেও হারটি এমনই হবে। খুব বেশি হেরফের হবে না।
এমতাবস্থায় মঙ্গলবার (১০অক্টোবর)) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে প্রথম বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। সে সময় দিবসটির যে থিম ছিল— তার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘সারা বিশ্বের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নত করা’। আর এবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার’।
দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সভা-সেমিনার ও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
একে/