শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে গবাদি পশুকে রক্ষা করার উপায়

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:১৬ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশে হাজার হাজার গবাদি পশু ও পাখি মারা যায়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন খামারিরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে যায়। পূর্বপ্রস্তুতি না থাকলে সেগুলো মোকাবিলা করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। একটু সতর্ক হলে সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া যায়। আমাদের দেশে মূলত দুইটি দুর্যোগ খুব মারাত্মক। একটি হলো ঘূর্ণিঝড় আরেকটি বন্যা। গবাদি পশুপাখির দুর্যোগ মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতি কী কী হতে পারে তাই আজকের আলোচনা।

০১. খামারের চাল মজবুত করে বাঁধা

দুর্যোগকালীন প্রবল ঘূর্ণিবাতাস যাতে খামারের চাল উড়িয়ে নিতে না পারে সেজন্য খামার এবং খামারের চাল শক্ত করে বাঁধতে হবে। পরে মাটিতে শক্ত করে খুঁটি পুঁতে শক্ত দড়ি দিয়ে খামারের চাল বেঁধে দিতে হবে।

০২. পানি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা

বর্ষাকালে বৃষ্টি বা বন্যার পানি যাতে জমে না থাকে সে জন্য পানি চলাচলের জন্য বিকল্প নালা তৈরি করে রাখতে হবে। কারণ হঠাৎ করে পানি বাড়তে শুরু করলে নালা তৈরি করার সময় পাবেন না। বৃষ্টির পানি শুষে নেয়ার জন্য খামারের চারপাশে সবজি চাষ করা যেতে পারে।

০৩. জলাশয়ের চারদিক ঘেরা

খামার যদি নদী, হ্রদ বা জলাশয়ের নিকটবর্তী হয় তা হলে যেদিক থেকে পানি খামারকে প্লাবিত করতে পারে সেদিকে উঁচু করে বাঁধ তৈরি করতে হবে। যাতে বন্যার সময় খামার বন্যার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে।

০৪. খামার সংস্কার

খামারের দরজা, জানালা দেয়াল সময় থাকতে ঠিক করে নিতে হবে। আবাসন, খাবার পাত্র, পথ রাস্তা, স্টোর এসব ঠিকমতো সুরক্ষিত করতে হবে।

০৫. খামারের ক্ষতিকর রাসায়নিক অপসারণ

খামারের আশপাশে কোথাও কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশক, জীবাণুনাশক, ইঁদুরনাশক থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। যেসব পুকুর বা অন্য জলাশয়ে এসব রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানি প্রবেশের সম্ভাবনা আছে তা চারপাশে উঁচু করে দিতে হবে। যাতে বৃষ্টি বা বন্যার পানি সেখানে ঢুকতে না পারে। এসব পদার্থ গবাদি পশুর মারাত্মক ক্ষতি, এমন কি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

০৬. দুর্যোগকালীন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহে রাখা

দুর্যোগকালীন বা দুর্যোগ পরবর্তী যেসব জিনিস প্রয়োজন হতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি করে দুর্যোগের আগেই সংগ্রহ করে রাখতে হবে। কারণ বিপদের সময় এ সব জিনিস নাও পাওয়া যেতে পারে। অথবা পাওয়া গেলেও অধিক অর্থ খরচ হতে পারে। প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রাখতে হবে।

০৭. গবাদি পশুকে টিকা প্রদান

গবাদি পশুপাখিকে প্রয়োজনীয় সব টিকা দিয়ে রাখতে হবে। কারণ দুর্যোগের পরে গবাদি পশুর বিভিন্ন ছোঁয়াছে রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু টিকা পশুপাখিকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করবে। বিপদকালীন স্থানান্তরের ক্ষেত্রে, কোন পশুগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে তার একটি তালিকা তৈরি করে রাখতে হবে। তাছাড়া পশুগুলো চিহ্নিত করে রাখতে হবে। যাতে দুর্যোগ পরবর্তী পশু হারিয়ে গেলে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। গরুর জন্য প্রয়োজনীয় দড়ি, খামার এবং পানি প্রস্তুত রাখতে হবে এবং যদি সম্ভব হয় গাভী স্থানান্তরের সময় সেসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতে হবে।

০৮. আশ্রয়ণ কেন্দ্রে স্থানান্তর

দুর্যোগকালীন গবাদি পশু আশ্রয়ণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করবে না কি বাইরে ছেড়ে দিতে হবে সেটা আশ্রয়ণ কেন্দ্রের দূরত্ব ও অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া যেতে পারে। অন্যথায়, বাইরে ছেড়ে দিতে হবে। পোষা কুকুর-বিড়াল থাকলে সেগুলো নিজের কাছে রাখাই উত্তম হবে।

আরো পড়ুন: কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে চা চাষে সফলতা

০৯. আগে মানুষ না কি পশু?

কিছু কিছু সময় এমন সময় আসে যখন নিজের প্রাণের তাগিদে পোষা পশুপাখিগুলোকে ছেড়ে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে পশুপাখিগুলোর জন্য পর্যাপ্ত খাবার এবং পানি সরবরাহ রেখে যেতে হবে। কম পক্ষে দুই দিনের খাবার-পানি রাখতে হবে। সাধারণত দুই একদিনের মধ্যে দুর্যোগকালে প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে পশু মারা যায় বা অসুস্থ হয়ে যায়। তবে যেগুলো বেঁচে থাকে সেগুলোকে উদ্ধারের পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয়।

এভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি আপনার গবাদি পশু, পোষা প্রাণী বা পাখিকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। সাথে সাথে দেশও মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/

প্রাকৃতিক দূর্যোগ গবাদি পশু

খবরটি শেয়ার করুন