ছবি: সংগৃহীত
জন্ম থেকেই অন্ধ জাবেদ মিয়া। বয়স ৩০ এর কাছাকাছি। যদিও তার দুই চোখের আলো ফেরানো সম্ভব নয় তবুও শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষার আলো পেয়েছেন শিক্ষার জাবেদ। তবে পড়াশোনা তাঁকে আশা দেখালেও বর্তমানে তিনি কাজের সংকটে ভুগছেন। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাবেদ।
এসবময় জাবেদ বলেন, ‘অন্ধত্ব পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়নি, সমস্যা হয়নি। সামাজিকভাবেও কোনো সমস্যা নেই। সবার সহযোগিতা মিলছে। কিন্তু কাজের ব্যবস্থা করতে না পারায় এখন সমস্যায় আছি। অর্থের অভাবে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’
জাবেদ মিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতারকাপনে। পড়াশোনা শেষে পরপর দুটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন তিনি। করোনাকালে তিনি চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের শিকার হন। ধারদেনা করে অল্প পুঁজির ব্যবসা শুরু করেছিলেন, সেটাও পুঁজির অভাবে আর চালাতে পারছেন না।
বাবা আবদুল ওয়াহিদ ও মা ছায়া বেগমের ৯ সন্তানের মধ্যে জাবেদ তৃতীয়। তাঁরা চার ভাই, পাঁচ বোন। বাবা ২০২১ সালে মারা যান।
সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমকে জাবেদ বলেন, জন্মান্ধ হওয়ায় জীবনের শুরু থেকে তাঁর সঙ্গী হয়ে আছে ঘোর অন্ধকার আর অনিশ্চয়তা। একটু একটু করে যখন বড় হলেন, এই অনিশ্চয়তার অন্ধকার আরও বাড়তে থাকে। ঠিক সেই রকম একটা সময় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিকী, তাঁকে নিয়ে যান মৌলভীবাজারের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসে। সেখানকার রিসোর্স শিক্ষক আকিল আহমদ তাঁকে সহযোগিতা করেন। তাঁকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসে ভর্তি করা হয়। সেই ছাত্রাবাসেই তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি।
পরে ওই ছাত্রাবাসে থেকেই মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন জাবেদ। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করেন। এসএসসির পর ছাত্রাবাস ছেড়ে বাড়িতে চলে যান। এইচএসসিতে ভর্তি হন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে। বাড়ি থেকে একাই কলেজে আসা-যাওয়া করতেন। ২০১৬ সালে তিনি একই কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক সম্মান (অনার্স) সম্পন্ন করেন।
আরো পড়ুন: বাবার স্বপ্নপূরণে প্রথম বিসিএসেই সাফল্য সৌমিকের
স্নাতক শেষ করার পর জাবেদ একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি শুরু করেন। কিছুদিন পর এই সংস্থা ছেড়ে ঢাকায় নতুন আরেকটি বেসরকারি সংস্থার চাকরিতে যোগ দেন। ২০২১ সালে বিয়ে করেন তিনি। ওই বছরই তিনি চাকরি হারান। সেই থেকে তিনি বেকার। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। সব মিলিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়ে জাবেদ বলেন, ‘বেকারত্ব ঘোচাতে সরকারি-বেসরকারি চাকরির চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোথাও কিছু করতে পারছি না।’
এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সুপারি, নারকেল কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন জাবেদ। কিন্তু পুঁজিতে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ঋণের পুরো টাকা শোধ হয়নি, ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মাসিক ৮৫০ টাকা ভাতা পান জাবেদ, তা খরচের তুলনায় খুবই সামান্য। ভাইয়েরা আগে সবাই একসঙ্গে ছিলেন, সংসার চলে যেত। এখন সবাই আলাদা হয়ে যাওয়ায় তাঁর জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এম.এস.এইচ/
খবরটি শেয়ার করুন