সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার, দরকার দূরদর্শী পরিকল্পনা

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৩:১১ অপরাহ্ন, ১লা নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

টানেল যুগে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম। অনেকটা অসাধ্য সাধন করেই কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে টানেল। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন, দোয়া ও মোনাজাতের পর গাড়িতে চড়ে তিনি টানেল ধরে রওয়ানা হন আনোয়ারা প্রান্তে। সেখানে নদীর তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন। এ টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে শিল্পঘেরা কর্ণফুলীর দুই পারের মধ্যে যোগাযোগ যেমন সহজ হলো, তেমনই সংযোগ স্থাপিত হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মধ্যে।

দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে এই টানেল। পদ্মা সেতু যেমন দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে তেমনি এই টানেলও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। 

চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার পর্যন্ত শিল্পায়ন, পর্যটন ও নগরায়ণের সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হলো। স্বভাবতই এতে গতি পাবে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকে একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। টানেল চালু হওয়ায় এখন দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার, বিশেষ করে সাগর উপকূলীয় এলাকা নগরায়ণ, পর্যটন ও শিল্পায়নের নতুন কেন্দ্রে পরিণত হবে। 

কেউ কেউ এলাকাটি দ্বিতীয় সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে বলেও আশা করছেন। এজন্য অবশ্য আরও কাজ করতে হবে। টানেলটির সুষ্ঠু পরিচর্যার পাশাপাশি নগরায়ণ, পর্যটন ও শিল্পায়নের গুরুত্ব বুঝে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং সেবার মানের দিকটিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

জানা যায়, টানেলটি উদ্বোধনের পর এখনই কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসহ আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার কারখানার পণ্য কম সময়ে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। আনোয়ারা ও মহেশখালীতে নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, শিল্পকারখানা হচ্ছে। আগামী দিনে এসব শিল্পকারখানার পণ্য পরিবহণ হবে টানেল দিয়ে। 

এতে টানেলের ব্যবহারও আরও বাড়বে। এ অঞ্চলের শিল্পায়নে কর্ণফুলী টানেল রাখবে বড় অবদান। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা শিল্পায়নের জন্য প্রথম শর্ত। বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে এ অঞ্চলে সেই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলো। যদিও শুধু সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়ে শিল্পায়ন হয় না। 

এজন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, জমির সহজলভ্যতা, বন্দর-এসবও দরকার। সেদিকে লক্ষ রেখে আমদানি করা গ্যাস নেওয়া হচ্ছে এ অঞ্চল দিয়ে। বাঁশখালী ও মহেশখালীতে রয়েছে বিদ্যুতের বড় দুটি প্রকল্প। অর্থাৎ গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য আলাদা করে বড় কোনো প্রকল্প নিতে হবে না। 

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। আবার দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সাগর উপকূলের কাছাকাছি জমির সহজলভ্যতাও আছে। ফলে শিল্পায়নের সব সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে এ অঞ্চলে। এখন শুধু দরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের মতো পরিকল্পিত শিল্প এলাকা গড়ে তোলা।

আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধু টানেলে যান চলাচল শুরু, খুশি যাত্রী-চালকরা

এছাড়া বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর যদি কার্যকর থাকত, তাহলে এই টানেল থেকে বাংলাদেশ আরও সুবিধা পেত। কারণ, ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত যোগাযোগ অবকাঠামোর কেন্দ্রস্থল হতে পারে বাংলাদেশ। 

ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কাটিয়ে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার অর্থাৎ চার দেশের অর্থনৈতিক করিডর বা বিসিআইএম কার্যকরের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হতে পারে। এসবের মধ্য দিয়ে এ টানেলের সুফল পুরোপুরি লাভ করা সম্ভব হবে, এটাই প্রত্যাশা।

এসি/ আই. কে. জে/



বঙ্গবন্ধু টানেল

খবরটি শেয়ার করুন