সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন মোরগের খামার করে পাহাড়ি দম্পতির ভাগ্যবদল

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৩০ অপরাহ্ন, ১৮ই নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

পাঁচ বছর আগের কথা। পাহাড়ে জুম ফসল কাটতে যাওয়ার সময় ৬-৭টি ডিমসহ একটি বনমুরগির বাসা দেখতে পান এক দম্পতি। সেখান থেকে তিনটি ডিম নিয়ে এসে ঘরে ‘তা’ দিতে থাকা দেশি মুরগির বাসায় রেখে দেন। এর মধ্যে ১টি ডিম পচে যায় আর দুইটি ডিম থেকে একটি মোরগ ও একটি মুরগির বাচ্চা ফুটে। এ দুই বাচ্চা দেশি মুরগির সঙ্গে বড় হতে থাকে। এ দুই বাচ্চা থেকে পাঁচ বছরে প্রায় দেড়শ বনমুরগি হয়েছে। 

নিজেদের ঘরের চারপাশে বেড়া দিয়ে বিভিন্ন গাছগাছালি লাগিয়ে বনের পরিবেশ তৈরি করেছেন। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে বনমোরগ-মুরগির খামার করেছেন এই দম্পতি। 

এ দম্পতির নাম হ্লা শোয়ে অং মারমা (৪০) ও শোয়ে মে চিং (৩৬)—ইতোমধ্যে বনমোরগ পালন করে তাক লাগিয়েছেন তারা। বান্দরবান সদর উপজেলার ১নং রাজবিলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেওয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা তারা।

স্থানীয়রা জানান, সাধারণত গহীন বনে থাকে বনমোরগ-মুরগি। তারা মানুষের আওয়াজ পেলে উড়াল দেয়। আর সেই বনের প্রাণীকে ঘরে রেখে পালন করা সহজ বিষয় নয়। 

হ্লা শোয়ে অং মারমা ও শোয়ে মে চিং জানান, লেখাপড়া জানেন না তারা। বাংলাও বলতে পারেন না। গত পাঁচ বছরে তাদের খামারে দেড়শ বনমুরগি উৎপাদন হয়েছে।  এছাড়া বর্তমানে ২২টি পরিপক্ক মুরগি, ১৩টি পরিপক্ক মোরগ, ২টি শিকারি মোরগ, ১৭টি বাচ্চাসহ তিনটি মা, ৯টি ডিম নিয়ে ‘তা’ দেওয়া মা আছে একটি। 

হ্লা শোয়ে অং মারমা জানান, একটি পরিপক্ক মোরগ তিন হাজার, মুরগি ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এ বছর ৮টি মুরগি ও ৫টি মোরগ বিক্রি করেছেন তারা। 

তিনি আরও জানান, ওজন দেশি মুরগির মতো নয়। এদের সাইজ দেশি মুরগীর তুলনায় ছোট এবং ওজনও কম। পরিপক্ক মোরগের ওজন সর্বোচ্চ ৭শ থেকে ৮শ গ্রাম হয়। আর মুরগির ওজন ৬শ থেকে ৭শ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে মা মুরগির ক্ষেত্রে ডিম থাকলে ওজন একটু বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি। 

হ্লা শোয়ে অং মারমা বলেন, ছোট-মাঝারি-ও বড় মিলে ৫৫টি মুরগীর জন্য প্রতিদিন ৬ কেজি ধানের প্রয়োজন হয়।  ভবিষ্যতে এ খামারকে আরও বড় ও বাণিজ্যিক খামার হিসেবে গড়ে তুলতে চান হ্লা শোয়ে অং মারমা ও শোয়ে মে চিং। 

বন বিভাগের বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি বন থেকে বন্যপ্রাণীকে ধরে নিয়ে এসে বাসা-বাড়িতে রাখলে বা পোষ মানার চেষ্টা করলে সেটা বন্যপ্রাণী নিধন আইনে অপরাধী হবেন।

আর যদি কোনো বন্যপ্রাণীর সঙ্গে গৃহপালিত মুরগি, প্রাণীর সঙ্গে ক্রস হয়ে গৃহেই থেকে যায়। পরবর্তীতে গৃহেই বংশবৃদ্ধি করে, তখন সেটা গৃহপালিত পশু বা পাখি হিসেবে ধরা হয়। আর যে বন্য মুরগির কথা বলা হয়েছে, সেটির ক্ষেত্রে মুরগিগুলো একপ্রকার গৃহপালিতই বলা যেতে পারে। 

আরো পড়ুন: জেনে নিন কম খরচে মাছ চাষের পদ্ধতি

তিনি বলেন, এ দম্পতি নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে। তাদের ঘরে থাকা ৫০-১০০টা মুরগি যদি ঘরেই উৎপাদন হয়ে থাকে তাহলে সেটা বন্য আইনে অপরাধ হবে না। কেননা ওই মুরগিগুলো একপ্রকার দেশি মুরগী বা ঘরের মুরগি হয়ে গেছে। 

এসি/ আই. কে. জে/

বন মোরগ খামার

খবরটি শেয়ার করুন