ছবি: সংগৃহীত
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর এক বছরে পাল্টে গেছে যশোরের বিমান রুটের দৃশ্যপট। ঢাকা-যশোর রুটে বিমানের যাত্রী অর্ধেকের নিচে নেমেছে। নিয়মিত ফ্লাইটের সংখ্যাও কমেছে। আগে যেখানে ১৮টি পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল করতো, তা এখন ছয়টিতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ অন্তত ১২টি ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। সঙ্গে কমেছে বিমানভাড়াও। খুলনা ও সাতক্ষীরার বহু যাত্রী আগে বিমানে যশোর থেকে ঢাকায় যাতায়াত করতেন। এখন সেই যাত্রী নেই বললেই চলে।
সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যশোর বিমানবন্দর যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো। ওই সময় যশোর-ঢাকা রুটে নিয়মিত ১৫টি পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল করতো। কখনো কখনো ফ্লাইট সংখ্যা ১৮টিতে ঠেকতো। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতো। যশোর-ঢাকা ছাড়াও যশোর-চট্টগ্রাম এবং যশোর-কক্সবাজার রুটে একদিন পরপর ফ্লাইট ছিল। বিমানের টিকিটও সহজলভ্য ছিল না। বাড়তি চাহিদার কারণে কখনো কখনো বিমানের টিকিটের দাম দ্বিগুণও হয়ে যেতো।
বিমানবন্দরে প্রবেশ, ঢাকায় যাওয়া ও ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে বের হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অথচ একটু ভালো বাসে গেলে পদ্মা সেতু হয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা লাগে। খুব সহজেই সড়কপথে ঢাকায় গিয়ে দিনের কাজ দিনে শেষ করে আবার বাড়ি ফেরা যায়।
গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরপর পাল্টে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় অনেকেই সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করছেন। আগে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে যেখানে ৬-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যেতো, সেখানে এখন ৩-৪ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের একবছর পর এখন যাত্রীসংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমেছে। ফ্লাইট কমে দাঁড়িয়েছে ছয়টিতে। ঈদসহ উৎসব-পার্বণে ফ্লাইটের সংখ্যা দু-একটি বাড়ে।
আরও পড়ুন: গৌরবের পদ্মা সেতুর এক বছর
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার এয়ারলাইনসের সাতটি ফ্লাইট বন্ধ। ইউএস-বাংলার সাতটি ফ্লাইটের মধ্যে চলাচল করছে তিনটি। আর নভোএয়ারের ছয়টির মধ্যে চলাচল করছে দুটি। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট দুটি থেকে কমে দাঁড়িয়েছে একটিতে। সেই হিসাবে বর্তমানে প্রতিদিন যশোর-ঢাকা রুটে ছয়টি ফ্লাইট চলাচল করছে। প্রভাব পড়েছে ভাড়ায়ও। বেসরকারি এয়ারলাইনস দুটিতে আগে সর্বনিম্ন ভাড়া চার হাজার টাকার ওপরেই থাকতো সবসময়। এখন সেটি দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত নেমেছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের যশোরের ব্যবস্থাপক সাব্বির হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর বিমানের যাত্রী অনেক কমে গেছে। ফ্লাইট সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমেছে। বিশেষ করে খুলনার যাত্রী বেশি কমেছে। খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। এতে তারা সড়কপথেই যাতায়াত করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যশোর-ঢাকা রুটে ইউএস-বাংলার ছয়টি ফ্লাইট চলতো। যশোর থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার রুটেও ফ্লাইট ছিল। এখন সেটি তিনটিতে নেমেছে। শুধু ঢাকা-যশোর রুটে এ তিনটি ফ্লাইট যাতায়াত করছে। ভাড়াও অনেক কমেছে। এখন যশোর-ঢাকা রুটের সর্বনিম্ন ভাড়া ২ হাজার২০০ টাকা।’
নভোএয়ারের যশোরের অফিস ইনচার্জ এস এম নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-যশোর রুটে আমাদের ছয়টি ফ্লাইট যাতায়াত করতো। এখন চলছে দুটি। পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী কমে গেছে। সর্বনিম্ন ভাড়াও ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত নেমে এসেছে।’ তবে ঈদুল আজহা উপলক্ষে তাদের দুটি ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে বলে জানান নভোএয়ারের এ কর্মকর্তা।
একসময় বিমানের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন যশোরের কেশবপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী উত্তম দাস। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার প্রয়োজনে আমাকে নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। ফেরিঘাটে দীর্ঘসময় লাগতো। এজন্য আগে বিমানে যেতাম। এখন পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত সহজ হয়েছে। কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছানো যায়। এজন্য বাসেই ঢাকায় যাতায়াত করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরে প্রবেশ, ঢাকায় যাওয়া ও ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে বের হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অথচ একটু ভালো বাসে গেলে পদ্মা সেতু হয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাওয়া যায়। বিমানে যে ভাড়া লাগতো, বাসভাড়া তার চার ভাগের এক ভাগ। খুব সহজেই সড়কপথে ঢাকায় গিয়ে দিনের কাজ দিনে শেষ করে আবার বাড়ি ফেরা যায়।’
কয়েকজন যাত্রী জানান, আগে সাতক্ষীরা ও খুলনার অনেক যাত্রী যশোরে এসে বিমানে ঢাকায় যেতেন। সাতক্ষীরা ও খুলনা থেকে সড়কপথে যশোর বিমানবন্দরে পৌঁছাতেই দুই ঘণ্টা লেগে যায়। আর পদ্মা সেতুর কারণে খুলনা থেকে তিন ঘণ্টায় এবং সাতক্ষীরা থেকে চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাওয়া যায়। ফলে যাত্রীরা সড়কপথে যশোরে আসার পরিবর্তে খুলনা হয়ে ঢাকায় চলে যাচ্ছেন।
যশোর বিমানবন্দরের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরে যশোর থেকে সব এয়ারলাইনসের যাত্রী কমেছে। এ কারণে ফ্লাইট সংখ্যাও কমে গেছে। এখন শুধু যশোর-ঢাকা রুটে ছয়টি ফ্লাইট চলছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি, নভোএয়ারের দুটি ও ইউএস-বাংলার তিনটি। শুধু ঈদ উপলক্ষে নভোএয়ারের দুটি ফ্লাইট বেড়েছে। আগে যশোর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ফ্লাইট চললেও এখন তা বন্ধ।’
এসি/ আইকেজে