শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কোন কোন লেনদেন আয়কর বিবরণীতে অবশ্যই লিখতে হবে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৩৭ অপরাহ্ন, ২৯শে নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি : সংগৃহীত

প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেবার সময় ব্যাংকের হিসাব বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। ব্যাংক হিসেবে কোন লেনদেন আয়করের আওতায় পড়বে সেটি নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে।

আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে একজন করদাতার বার্ষিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ জমা দেয়াকে আয়কর রিটার্ন বলে। এখানে আয়, ব্যয় এবং সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। একজন মানুষের বার্ষিক আয় কত সেটার ভিত্তিতে তার ওপর কর আরোপ হয়।

যারা আয়কর রিটার্ন জমা দেন তাদের অনেকের ক্ষেত্রে স্যালারি অ্যাকাউন্ট বা চলতি হিসাব অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যখন তার আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন, সেখানে সব ধরনের অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা দিতে হবে।

কারও একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকলেও আয়কর নথিতে সব অ্যাকাউন্টের তথ্য না দিয়ে শুধু একটি অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দিয়ে রিটার্ন জমা দেন। সেক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, আয়কর নথিতে যে আয় দেখানো হয়েছে, তার চেয়ে ব্যাংক লেনদেন বেশি। তাতেই বিপত্তিতে পড়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ আয়কর নথি বিভিন্ন সময় পর্যালোচনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা।

যদি দেখা যায়, কেউ তার ব্যাংক হিসাবের তথ্য জমা দেননি, তখন সেটি অপ্রদর্শিত আয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন জরিমানা করার বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়কর আইনজীবীরা।

আয়কর আইনজীবী এবং সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ জানান, আয়কর রিটার্নে যে আয় দেখানো হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আয় বা অপ্রদর্শিত আয় পাওয়া গেলে তার ওপর জরিমানাসহ কর দিতে হয়।

এক্ষেত্রে আগে যে আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে, তা যদি নতুন করে ধার্য করা করের ৭৫% এর কম হয়ে থাকে, তাহলে ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তবে আগে পরিশোধ করা কর নতুন নির্ধারিত করের ৭৫ শতাংশের বেশি হলে আর জরিমানা হবে না।

ব্যাংকে যে লেনদেন হবে তা অবশ্যই আয়কর নথিতে প্রদর্শিত আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অন্য কোনও প্রকার লেনদেন হলে তার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। কারও যদি একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, সেসব অ্যাকাউন্টে যদি তারা লেনদেন করে থাকেন, তাহলে সেইসব অ্যাকাউন্টের তথ্যও আয়কর বিবরণীতে সংযুক্ত করতে হবে।

ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত মোট সুদ বা মুনাফা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে দেখাতে হবে। উৎসে কর প্রদেয় করের সাথে সমন্বয় হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, ব্যাংক হিসাবের কোনও তথ্য গোপন রাখা যাবে না। কর ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে করদাতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্যে সরাসরি প্রবেশাধিকার চেয়েছে। এর ফলে রাজস্ব বোর্ড করদাতা ও ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য খুব সহজেই জানতে পারবে, যা তাদের লেনদেন, ঋণ ও বিনিয়োগসহ সব ধরণের আর্থিক লেনদেন নজরদারিতে সহায়তা করবে।

তবে এতে ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়বে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আবার গ্রাহকদের মধ্যে ভীতি তৈরি হলে ব্যাংকে নগদ টাকা রাখা বা লেনদেন কমে যেতে পারে। ফলে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল ১৩ কোটি ৬২ লাখের মতো, যেখানে প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা জমা ছিল । এর মধ্যে ১ কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে, এমন অ্যাকাউন্টের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার।

এনবিআর-এর ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (বিআইএন) নম্বরধারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫৭ হাজার, যার মধ্যে গত মাসে কর রিটার্ন জমা হয়েছে ৩ লাখের বেশি। অর্থাৎ, বিআইএন হোল্ডারদের এক-তৃতীয়াংশও রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। 

আই.কে.জে/

আয়কর বিবরণী

খবরটি শেয়ার করুন