ব্যবসার রাজ্যে অত্যন্ত সুপরিচিত সিঙ্গাপুর। আকর্ষণীয় কর ব্যবস্থা, কর চুক্তির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, ভূ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থায়নের প্রাপ্যতা, বিশ্বের অন্যান্য অংশের সাথে সংযোগ এবং ভালো অবকাঠামোর কারণে বিশেষ জনপ্রিয় সিঙ্গাপুর।
সিঙ্গাপুরেও অনেক ভারতীয় প্রবাসী রয়েছে যারা সেখানকার মাটিতে ভারতীয় ব্যবস্থার ঘাঁটি স্থাপন করেছে। সিঙ্গাপুরে ভারতীয় হাইকমিশনারের মতে, প্রায় ৯০০০ ভারতীয় কোম্পানি রয়েছে সেখানে। টাটা গ্রুপ, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আদানি গ্রুপ, ইনফোসিস এবং উইপ্রোর মতো উল্লেখযোগ্য ভারতীয় সংস্থাগুলোর ঘাঁটি রয়েছে সিঙ্গাপুরে। তাছাড়া বহু বছর ধরে ভারত ও সিঙ্গাপুর শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্কেও আবদ্ধ।
২০২১-২২ অর্থবছরে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩০১.১ কোটি মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সামগ্রিক বাণিজ্যের ২.৯ শতাংশ অংশ নিয়ে সিঙ্গাপুর ভারতের ৬ষ্ঠতম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। অন্যদিকে ভারত সিঙ্গাপুরের ১২তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং সিঙ্গাপুরের সামগ্রিক বাণিজ্যের ২.৩ শতাংশের অংশীদার ভারত।
২০২১ সালে সিঙ্গাপুরে ভারতের এফডিআই (বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ) ছিল ১৮৪.১ কোটি। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর থেকে ভারতে এফডিআই ১৫৮.৭ কোটিতে এসে পৌঁছেছে। ২০০০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে ১৪০৯.৯ কোটি বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুর হলো ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ।
সিঙ্গাপুর থেকে এফডিআই ইক্যুইটি প্রবাহকে আকৃষ্ট করে এমন শীর্ষ ক্ষেত্রগুলো হল পরিষেবা খাত, কম্পিউটার সফ্টওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার, ট্রেডিং, টেলিযোগাযোগ, এবং ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস। তাছাড়া এখানে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
২০১৪ সাল থেকেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে ভারত বিভিন্ন দেশকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে নতুন প্রযুক্তি ও পুঁজির প্রবাহ সহজতর হয়। সরকার দেশে বিদেশি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সহজতর করেছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা করার সহজতা সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে ভারত ১৩০ তম স্থান থেকে ৬৩ তম স্থানে উঠে এসেছে।
ভারতের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে মোট অভ্যন্তরীণ পণ্যের উৎপাদন খাতের অংশ ১৬ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা।
সাম্প্রতিক সময়ে, ভারত অ্যাপল, স্যামসাং, কিয়া, বোয়িং, সিমেন্স এবং তোশিবার মতো কোম্পানিগুলোকে তাদের দেশে কার্যক্রম চালানোর জন্য আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে কোভিড ১৯ মহামারী এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও ভারতের পক্ষেই কাজ করেছে।
পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এবং চীনে যেসব কোম্পানি পণ্য উৎপাদন করতো তাদের বেশিরভাগই এখন ভারতে স্থানান্তরিত হতে চাচ্ছে।
তাছাড়া এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরও একাজে তাদের সহযোগিতা করছে যেন তারা ভারতে তাদের জন্য উপলব্ধ সুযোগগুলো থেকে উপকৃত হয়। এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর হল সিঙ্গাপুর সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংবিধিবদ্ধ বোর্ড। এর লক্ষ্য হল সিঙ্গাপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক উদ্যোগের উন্নয়নে সহায়তা করা, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের উদ্ভাবন, রূপান্তর এবং আন্তর্জাতিকীকরণে সহায়তা করা।
পূর্বে অনেক বিদেশি কোম্পানির ভারতে প্রবেশের জন্য স্থানীয় অংশীদারের প্রয়োজন হতো এবং বিদেশি মালিকানার উপরেও একটি সীমা ছিল। যাইহোক, আজ, বেশিরভাগ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো শতভাগ এফডিআই অনুমোদিত।
ভারতে উৎপাদন বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, সরকার আমদানিকৃত উপাদানগুলোর উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে। এর অর্থ হল ভারতে অবস্থিত নির্মাতাদের স্থানীয় সরবরাহকারীদের খুঁজে বের করতে হবে এবং এইভাবে তারা তাদের খরচ কমাতে পারে।
এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর ভারতের সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করছে। ভারতের সবচেয়ে শিল্পোন্নত রাজ্য তামিলনাড়ুতে ব্যবসা চালানোর জন্য তারা অধিক আগ্রহী বলে জানা যায়।
আই. কে. জে/