ভারতের মিজোরামের অধিকাংশ নাগরিকেরই প্রিয় খেলা ফুটবল। এখানে সম্প্রতি হকির জনপ্রিয়তাও পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে আছে।
এমনকি স্থানীয়রাও মিজোরামের ক্রিকেটারদের নাম মনে করতে হিমশিম খাবে।
১৯৭০ সাল থেকেই এ অঞ্চলের লোকেরা ক্রিকেট খেলতে থাকলেও ফুটবল এবং অন্যান্য খেলার তুলনায় ক্রিকেটের খ্যাতি খুব কমই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও এখানকার ক্রিকেটাররা দমে যায় নি।
এখানকার একজন ক্রিকেটার জানান, তিনি প্রায় ১৬ বছর বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলছেন। এমনকি এ অঞ্চলের দুইটি দলের একটির অধিনায়ক হিসেবেও ছিলেন তিনি। তাছাড়া মিজোরামের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়েও খেলেছেন তিনি।
তিনি বিশ্বাস করেন, মিজোরামে ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। বর্তমান সময়ে তিনি ক্রিকেটকেই শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনে করছেন।
মিজোরামের অনেক খেলোয়াড়ই ক্রিকেট নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন। নারী ক্রিকেটারেরা একদিন ভারতের জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে।
তবে মিজোরামের দুর্বল পরিকাঠামো উপলব্ধি করে এখানকার ক্রিকেটারদের ভারতের অন্যান্য রাজ্যের খেলোয়াড়দের তুলনায় দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে।
বিসিসিআই এপেক্স কাউন্সিলের সদস্য, মিজোরামের ক্রিকেটের অন্যতম পথিকৃৎ মামম মজুমদার বলেছেন, মিজোরামে থেকে এতদূর আসা সত্যি বলতে গেলে অনেক কঠিন ছিল। বিসিসিআই মিজোরামের খেলোয়াড়দের কথা কখনোই তেমনভাবে ভাবেনি। অন্য পাঁচটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য থেকে সহযোগী সদস্য থাকলেও এখান থেকে কোন সদস্য ছিল না। বিসিসিআই এর সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন তারা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা এখানে পরিদর্শনের জন্য এলেও তা এখানকার খেলোয়াড়দের জন্য কোন সুবিধা আনে নি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে লোধা কমিটির সুপারিশে তিনি এ স্থান পান। তবে বর্তমান বিসিসিআই প্রশাসন, বিশেষ করে সেক্রেটারি জয় শাহ, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সুবিধার কথা চিন্তা করছেন।
২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারী, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট লোধা কমিটিকে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এর উন্নতির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ বিশ্লেষণ ও সুপারিশের দায়িত্ব প্রদান করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, মিজোরামের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বিসিসিআই সদস্যপদ পাওয়ার জন্য নিয়মিত আবেদন করেছিল কিন্তু অনুমোদন পায়নি। ২০১৮ সালে যখন মিজোরাম ক্রিকেট দল আত্মপ্রকাশ করে তখন তেলেঙ্গানা ক্রিকেট দল তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে।
প্রথমবারের মতো সেদিন মিজোরাম ক্রিকেট দল দুদিনের ফরম্যাটে লিগ খেলে এবং হেরে যায়।
বিলম্বিত অধিভুক্তির কারণে এখানকার ক্রিকেটের পরিকাঠামোও দুর্বল। বর্ষাকালে খেলোয়াড়দের অনুশীলন করার জায়গা না থাকায় তাদের অন্য রাজ্যে পাঠাতে হয়।
তবে মিজোরাম সরকার এখানকার ক্রিকেটের উন্নতিতে মনোনিবেশ করেছেন। শহরের অনেক জায়গায় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য কংক্রিট পিচ তৈরি করা হয়েছে।
মিজোরামের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত কোচ রুয়াতসাঙ্গাও বর্ষা মৌসুমে ক্রিকেটারদের যে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তা নিয়ে কথা বলেন।
তবে দুর্বল অবকাঠামো এখানকার ক্রিকেটারদের মনোবল ভাঙতে পারে নি। নিয়মিত নতুন নতুন খেলোয়াড়েরা এ খেলায় যুক্ত হচ্ছেন।
মিজোরামের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (সিএএম) এবং বিসিসিআই গত কয়েক বছরে ক্রিকেটের প্রচারে বেশ ভাল কাজ করেছে। ৯০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০-এর দশকের গোড়ার দিকে, রাজ্যে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা লাভ করলেও তখন সিএএম-এর কাছে সরকার বা বিসিসিআই-এর সমর্থন ছিল না। বর্তমানে এ সমর্থন লাভের পর ক্রিকেটের উন্নতি দ্রুতগতিতে হবে বলেই আশা সবার।
আই.কে.জে/