ছবি: আনন্দবাজার অনলাইন
মহারাষ্ট্রের প্রথম মহিলা বাসচালক তিনি। অথচ এক সময় সাইকেলও চালাতে পারতেন না। সেই অর্চনা আটরামকে কুর্নিশ জানালেন মন্ত্রী থেকে সমাজকর্মী সকলেই।
এক সময় সাইকেলও চালাতে পারতেন না। সেই অর্চনা আটরাম এখন আস্ত বাস চালান। মহারাষ্ট্র রাজ্য সড়ক পরিবহণ (এমএসআরটিসি) দফতরের প্রথম মহিলা বাসচালক তিনি।
পুণে জেলার সাস্বড় থেকে নিরা পর্যন্ত বাস চালিয়ে নিয়ে যান অর্চনা। মোট ৩৫ কিলোমিটার রাস্তায় বাস চালান তিনি।
মহারাষ্ট্র সরকারের প্রথম মহিলা বাসচালককে অভিনন্দন জানিয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসও। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘আরও একটা কাচের দেওয়াল ভাঙল। মহারাষ্ট্র সড়ক পরিবহণ দফতরের প্রথম মহিলা বাসচালক হয়ে অর্চনা ইতিহাস তৈরি করেছেন।’’ তাঁর আশা, শীঘ্রই অর্চনার সঙ্গে আরও অনেক মহিলা সরকারি বাস চালানোর কাজে যোগ দেবেন।
বাস চালানোর জন্য প্রায় ১০০ জন মহিলাকে প্রাথমিক ভাবে বাছাই করেছিল এমএসআরটিসি। ২০১৯ সালে তাঁদের বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু মাঝে অতিমারি শুরু হওয়ায় তাঁদের প্রশিক্ষণ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত পুণেতে ১৮ জন মহিলাকে বাস চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষ করে ৬ জন মহিলা কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সকলের আগে বাস চালানো শুরু করলেন অর্চনাই।
অর্চনা কাজে যোগ দেওয়ার পর উচ্ছ্বসিত সহকর্মীরাও। তাঁরা মনে করেন, এত ভারী যান চালানো সহজ নয়। কিন্তু অর্চনা অতি সহজেই সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাশ করে গিয়েছেন। ডিপোর ম্যানেজার প্রবীণ গায়কোয়াড় জানিয়েছেন, তাঁকে সহকর্মী হিসাবে পাওয়া সৌভাগ্যের।
ছবি: আনন্দবাজার অনলাইন
রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রধান রূপালি চাকানকার সমাজমাধ্যমে অর্চনার বাস চালানোর একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। অভিনন্দন জানিয়েছে লিখেছেন, ‘‘যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এখন আপনার হাতে।’’
অর্চনার বয়স ৩০ বছর। নান্দেড় জেলার কিনওয়াত তালুকের বাসিন্দা তিনি। পরিবার বলতে বাবা, দুই ভাই, ভ্রাতৃবধূ।
অর্চনা জানিয়েছেন, মায়ের মৃত্যুর পরেও তাঁর পরিবার তাঁর কোনও ইচ্ছায় বাধা দেননি। সমর্থন করে গিয়েছেন। তিনি যখন বাসের চালক হতে চেয়েছিলেন, তখনও বাধা দেননি পরিবার।
একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়ে অর্চনা জানিয়েছিলেন, সাইকেলও চালাতে পারতেন না তিনি। ক্লাচ, গিয়ার, অ্যাকসিলেটার কাকে বলে, কোনও ধারণাই ছিল না।
অর্চনার কথায়, ‘‘অতিমারি শেষ হওয়ার পর পুণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দিই। যখন সেখানে যোগ দিই, তখন কিছুই জানতাম না।’’ তিনি জানিয়েছেন, বাস চালানোর বিষয়ে যা কিছু শিখেছেন, সবটাই প্রশিক্ষকের কাছে।
সাহস সঞ্চয় করে বাসের চালক হওয়ার আবেদন করেছিলেন অর্চনা। তিনি জানিয়েছেন, প্রশিক্ষকদের সহায়তাতেই এখন তিনি মহারাষ্ট্র সড়ক পরিবহণ দফতরের প্রথম মহিলা চালক।
২০১২ সালে মহারাষ্ট্র সড়ক পরিবহণ দফতর ৮৬টি আসন মহিলা চালকদের জন্য সংরক্ষণ করেছিল। যদিও এর পর দফতর বিপাকে পড়ে। কারণ ওই আসনগুলির জন্য আবেদনই জমা পড়েনি।
আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিয়ম। বলা হয়েছিল, চার বছর ভারী যান না চালালে কোনও মহিলা বাসের চালক পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। সে কারণে আবেদন জমা পড়ত না।
আরো পড়ুন: যুবকের মুখে প্রস্রাব, পা ধুইয়ে ক্ষমা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী
২০১৯ সালে এই নিয়ম বদলানো হয়। তখনই ১৫০ জন মহিলা চালক এবং কন্ডাক্টর প্রাথমিক বাছাই করে পরিবহণ দফতর। তাঁদের মধ্যে অর্চনা-সহ ছ’জনকে বাস চালানোর কাজে নিয়োগ করা হয়েছে।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিমারির কারণে নিয়োগের প্রক্রিয়া পিছিয়ে গিয়েছিল। নিয়োগের পর এক বছর ধরে চলে প্রশিক্ষণ। অবশেষে বাস চালানো শুরু করলেন অর্চনা।
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন
এম এইচ ডি/