শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ১২ সদস্য গ্রেপ্তার, ১৬ বছর ধরে সক্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪৮ অপরাহ্ন, ১৩ই আগস্ট ২০২৩

#

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ১২ ব্যক্তি - ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস করেছে একটি চক্র। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সাত ডাক্তারের মধ্যে পাঁচজন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। আরেকজন ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তির কোচিং সেন্টারের আড়ালে তারা প্রশ্ন ফাঁসের কারবার চালিয়ে আসছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি সাইবার টিম।

রোববার বেলা ১২টায় মালিবাগ সিআইডি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিআইডির সাইবার ইউনিটের এসএসপি তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত এসএসপি জুয়েল চাকমা ও আজাদ রহমান।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মেডিকেল ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড ডাক্তার ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান। তিনি ফাইন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। তিনি গত ১৭ বছরে শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার স্ত্রী জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ডাক্তার সোহেলী জামানও এই চক্রের সদস্য। অন্যতম সদস্য ডাক্তার আবু রায়হান, ডাক্তার জেডএম সালেহীন শোভন, ডা. জোবাইদুর রহমান জনি, জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) চিকিৎসক জিল্লুর হাসান রনি, ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল। এছাড়া জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার, রওশন আলী হিমু, আক্তারুজ্জামান তুষার, জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২০ সালের প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্তে নেমে সিআইডি প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা জসীম উদ্দীন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রেসের মেশিনম্যান জসিমের খালাত ভাই মোহাম্মদ সালামকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তাদের দেওয়া চৌষট্টি ধারার জবানবন্দিতে এই চক্রের ১২ জনের নাম আসে। দীর্ঘ দিন তারা পলাতক ছিলেন। অবশেষে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিআইডির প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক, প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কোনো অপরাধ করেছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। 

এই চক্রের ৮০ জন সক্রিয় সদস্য বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। এই চক্রের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে সিআইডি প্রধান।

২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস করেছে। গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানান সিআইডি প্রধান।

তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এরমধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়েছেন।

আই. কে. জে/ 

প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র

খবরটি শেয়ার করুন