একসময় বিশ্বাস করা হতো, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান মাও সে তুংয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। শি তার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশকে মাও সে তুংয়ের মতো করে চালাতে চাইতেন এবং বিশ্বের বুকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) এর জন্য পাকাপোক্ত জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। তবে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শি জিনপিং তার পূর্বসূরিদের চিহ্ন সরাতে ব্যস্ত। তিনি চীনকে নিজের মতো করে চালাতে চাইছেন এবং চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন।
চীনের স্টেট কাউন্সিলের কার্যকারিতার জন্য গত মাসেই তিনি নতুন কিছু নিয়ম কানুন প্রবর্তিত করেন যার দ্বারা তার উদ্দেশ্য আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। তার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চীনের সমস্ত রাজ্যগুলোকে এখন শিয়ের নির্দেশ মোতাবেক চলতে হবে।
স্টেট কাউন্সিল এখনও চীনের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে, তবে কাউন্সিল নিজেই এখন সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে রিপোর্ট করবে। বিধিপুস্তকের নির্দেশিকাগুলো ২০১৮ সালের ৬৪ টি নিবন্ধ থেকে ২০২৩ সালে এসে ৪৩ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। রাজ্য কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের এখন যেকোনো বড় সিদ্ধান্ত, বড় ঘটনা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে রিপোর্ট করতে হবে। ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ এ রাজ্য কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে রাষ্ট্রীয় পরিষদের কার্যপ্রণালী সংশোধন করা হয়। এর মাধ্যমে শিয়ের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে।
নতুন নিয়মগুলো এখন শুধুমাত্র শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করে। চীনের বুক থেকে মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মাও সে তুংয়ের চিন্তাধারা সবকিছু মুছে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ চীনকে পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন সমাজতন্ত্রের সাথে শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারা প্রতিফলিত হবে। তাছাড়া স্টেট কাউন্সিলকে এখন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান শি জিনপিংয়ের সাথে যোগাযোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। সুতরাং এ ব্যাপার স্পষ্ট যে, বর্তমানে চীনের কর্তৃত্ব একমাত্র শিয়ের উপরেই ন্যাস্ত রয়েছে। চীনের প্রায় সমস্ত অঙ্গ সংগঠন এখন প্রেসিডেন্ট শিয়ের অধীনে চলে এসেছে এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যই এখন চীনকে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয়।
তবে পার্টি কংগ্রেসের সময় চীনা রীতিনীতির সাথে তার সমাজতন্ত্রের ভিত্তি হিসেবে মার্কসবাদের উল্লেখ করেছিলেন শি জিনপিং।
প্রাসঙ্গিকভাবে, চীনা প্রধানমন্ত্রী রাজ্য কাউন্সিলের প্রশাসনিক বিধি-বিধানের দ্বাররক্ষক হিসেবে রয়ে গেলেও, কাউন্সিলকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছ থেকে পার্টির সামগ্রিক কাজের সাথে সম্পর্কিত প্রধান নীতি ও নীতির বিষয়ে নির্দেশনা ও প্রতিবেদন চাইতে হবে। স্টেট কাউন্সিলের অনেক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ফলে স্টেট কাউন্সিলের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা কমে গিয়েছে।