মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান যে, তিনি যে উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে চীন সফরে গিয়েছিলেন সে উদ্দেশ্য পূরণে অগ্রসর হয়েছেন। দুই দেশই তাদের মধ্যকার সম্পর্ক স্থিতিশীল করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে, তবে দ্বিপাক্ষিক উন্নতি হতে আরেকটু সময় লাগবে।
চীনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান যে, হঠাৎ করেই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে না, তবে চেষ্টা চলমান।
বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ব্লিঙ্কেনই প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নতির জেরে চীন সফরে গিয়েছেন।
তিনি চীনে মূলত গিয়েছিলেন চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়ে, একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সমস্ত ভুল বুঝাবুঝি কমাতে।
তিনি জানান, চীন সফরে গিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকে বসেছেন। একইসাথে তিনি চীনের শীর্ষ পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ওয়াং ই এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং এর সাথেও কথা বলেছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং উত্তর কোরিয়া সম্পর্কেও তিনি চীনের সাথে কথা বলেছেন। তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের উস্কানিমূলক কার্যক্রম সম্পর্কেও মার্কিন উদ্বেগের কথা উত্থাপন করেছেন তিনি। তাইওয়ান এর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তনীয় বলে জানান তিনি। মানবাধিকার বিষয়েও চীনকে চাপ দিয়েছেন তিনি।
চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খারাপ সম্পর্কে থাকতে চাইছে না বলে জানান তিনি। চীন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলোকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা রাশিয়াকে কোনও ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র সহায়তা দেবে না।
চীনের সংস্থাগুলো রাশিয়াকে এমন সব অস্ত্র সরবরাহ করছে যার দ্বারা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রাণঘাতী হতে পারে, সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে চীনা সরকারকে সতর্ক করেন তিনি।
বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ দ্য পিপল এ আধা ঘন্টা ধরে মার্কিন প্রতিনিধি ও চীনা প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক চলে। এ বৈঠক বিকেল ৪.৩৪ এ শুরু হয় এবং ৫.০৯ এ শেষ হয়।
শি ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, বিশ্বের কথা ভেবে চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থিতিশীল হওয়া প্রয়োজনীয়। দুই দেশ একসাথে চলতে পারবে কি না এর উপর মানবজাতির ভবিষ্যৎ ও ভাগ্য নির্ভর করছে।
চীন যেমন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সম্মান করে এবং এর ক্ষতি চায় না তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেরও উচিত চীনের অধিকার ও স্বার্থের ক্ষতি না করা বলে জানান শি।
রাশিয়ার সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে শুরু করে চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি সীমিত করার জন্য আমেরিকান প্রচেষ্টার মতো অনেকগুলো বিষয় নিয়ে দুই বৈশ্বিক শক্তি ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বে রয়েছে।
বছরের শুরুর দিকে বেলুন কেলেঙ্কারিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে, তখনকার মতো বাতিল হয়ে যায় ব্লিঙ্কেনের চীন সফর।
সোমবারে ব্লিঙ্কেন এবং ওয়াংয়ের মধ্যে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে বৈঠক চলে। এ বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আন্তর্জাতিকভাবে চীনা সরকারের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং দেশে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
ওয়াং দুইদেশের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মূল কারণ হিসেবে চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ধারণাকে দায়ী করেন। যুক্তরাষ্ট্র চীনা প্রযুক্তির বৃদ্ধিকে স্তিমিত করার চেষ্টা করে এবং চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এগুলো বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
ওয়াং বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্থিতিশীল হওয়া জরুরি। এ জন্য সঠিক পথ এ দুই দেশকেই খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি আরো বলেন যে, তাইওয়ান চীনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাইওয়ানের দখল থেকে ফিরে আসার কোন উপায় কিংবা ইচ্ছা চীনের নেই।
ওয়াং এর বক্তব্য কিন গ্যাংয়ের তুলনায় একটু বেশি উদ্ধত শোনা গেছে। কিন গ্যাং জানিয়েছিলেন দুই দেশ তাদের সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে সম্মত। অন্যদিকে ওয়াং কিছুটা লড়াইয়ের সুরেই কথা বলেছেন।
রবিবারে পাঁচ ঘন্টা ধরে কিনের সাথে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। তবে দুইদেশের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বৈঠকের সময়েও দৃশ্যমান ছিল। এখন পর্যন্ত কোন দেশই কোন সুনির্দিষ্ট চুক্তির কথা উল্লেখ করেনি।
নভেম্বরে বালিতে জি-২০ বৈঠকের এক ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি বৈঠকে বসেন। এরই ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারির শুরুতে ব্লিঙ্কেনের চীন সফরের কথা ছিল।
ফিলিপ ওয়াং, নেক্টার গান, মেংচেন ঝাং এবং মার্থা ঝো
সূত্র: সিএনএন
আই. কে. জে/