বৃহস্পতিবার, ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি নথিপত্র কুক্ষিগত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইন অবমাননা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:০৩ অপরাহ্ন, ১৪ই জুন ২০২৩

#

গৌতম রাও
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প জড়িয়ে পড়েছেন আরেক কেলেংকারিতে। অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে যেকোন ধরনের  কেলেংকারির সম্পর্ক নতুন নয়।

পূর্বে ট্রাম্পের দ্বারা সংঘটিত অপকর্মগুলো তার নিজের জন্যে ছিল, নিজেকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কিংবা আইনের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। অন্যদিকে সরকারি নথিপত্র কুক্ষিগত করার মাধ্যমে তিনি সরকারি ব্যবস্থাতেও নাক গলান।

সরকারি এডভোকেট জ্যাক স্মিথ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনেন তাতে তার অপকর্মের বিধ্বংসী প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়। মূলত হোয়াইট হাউস থেকে বেশ কিছু সরকারি নথিপত্র ট্রাম্প তার নিজের বাসভবনে কুক্ষিগত করে রাখেন। এগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এবং পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে বেশ কিছু গোপনীয় তথ্য রয়েছে। ট্রাম্পকে এই নথিগুলো জাতীয় আর্কাইভে প্রেরণের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি যে কতবড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এ ব্যাপারে ট্রাম্প নিজেও অবগত ছিলেন কিন্তু তিনি এ তথ্য প্রকাশ্যে আনেন নি।

শত শত বছর আগে, একজন সরকারী কর্মকর্তা যখন অফিসিয়াল পদ থেকে সরে দাঁড়াতেন, তখন ক্ষমতার অভিজাত তত্ত্বানুযায়ী তাদের অফিসে থাকা সব রেকর্ড তাদের সাথে নিয়ে যেতেন, এমন প্রথা ছিল।

দেখা যেতো সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা, যেমন, শেরিফ, কর সংগ্রহকারী, পরিদর্শক কিংবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা তাদের পদমর্যাদা ব্যবহার করে লোকের ভালো করার নামে মূলত ব্যবসা করতো। এ প্রচলন আমেরিকার বিপ্লব বা স্বাধীনতার বেশি আগের কথা নয়।

তবে উনবিংশ শতকে সরকারের আধুনিক রূপ প্রচলন হয়। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার এই আধুনিক রূপের সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সেসময় থেকে সরকারি কাজকর্ম বাড়ির পরিবর্তে অফিসে করার প্রচলন হয়।

অফিসারদের তখন ব্যক্তিগত ক্ষমতা ব্যবহার করার সুযোগ না দিয়ে প্রশাসনিক বিধি দ্বারা দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হতো।

সময়ের সাথে সাথে, সরকারি কর্মীদের পেশাদারিকরণ সিভিল সার্ভিসের উত্থান, আমলাতান্ত্রিক বিশেষজ্ঞদের উত্থান এবং প্রশাসনিক আইন প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। বিংশ শতকে, রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টের নতুন চুক্তি এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আইন সরকারি সংস্থার একটি ক্রমবর্ধমান জটিল এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার ভিত্তি হয়ে ওঠে।

রাষ্ট্রপতি রিচার্ড এম. নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডস অ্যাক্ট পাস করা হয়।

অপমানজনকভাবে পদত্যাগ করার পর এবং অভিশংসন এড়াতে, নিক্সন তার খ্যাতি রক্ষা করার জন্য অফিসে তার সময়ের রেকর্ড রাখতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে কংগ্রেস নিক্সনকে রেকর্ড আটকে রাখা থেকে বিরত রাখার জন্য বিশেষভাবে একটি আইন পাস করে এবং কয়েক বছর পরে দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডস অ্যাক্টের মাধ্যমে এটি অনুসরণ করা হয়, যা স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রপতির রেকর্ডগুলোকে পাবলিক রেকর্ড হিসেবে মনোনীত করে। রাষ্ট্রপতির রেকর্ড এখন আমেরিকান জনগণের, রাষ্ট্রপতির নয়। 

এ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি ট্রাম্পের শেষ কাজটি মূলত আইনের শাসনের মৌলিক প্রত্যাখ্যান। এই আলোকে, আমরা ফেডারেল সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা ভেঙে ফেলার রক্ষণশীল প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো দেখতে পারি। ট্রাম্প সবসময়ই নিজেকে রাজার ন্যায় দেখেছেন এবং আইনের উর্ধ্বে চিন্তা করেছেন।

তার প্রশাসনের অফিসিয়াল রেকর্ডগুলো তার কাগজপত্র এবং তিনি সেগুলোর সাথে যা খুশি তাই করতে পারেন বলে জোর দিয়ে, ট্রাম্প সেই আগের সময়ের কথা তুলে ধরেন যখন সরকার ছিল ধনী ও ক্ষমতাবানদের একচেটিয়া দখলে এবং যখন অভিজাতদের হাতে ক্ষমতা ছিল। 

তবে আমরা কি এখনও সেই পূর্বের ধ্যান ধারণা পোষণ করে চলেছি? নাকি ট্রাম্প আমাদের জোরপূর্বক সেই অতীতে টেনে ফেলেছেন? সরকারি নথি রাখার ব্যাপারে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলা এই সরকারি বিচার কোন সাধারণ ঘটনা নয়, বরং তা আইনের শাসনের ব্যাপার।

সূত্র: সিএনএন

আই. কে. জে/

Important Urgent

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন