ছবি: সংগৃহীত
ভারতের অরুণাচল প্রদেশের শি ইয়োমি জেলায় অবস্থিত মেচুখা, এখানকার মনোমুগ্ধকর উঁচু উপত্যকা যা এই অঞ্চলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌসুমি বায়ু এবং তুষারাচ্ছন্ন পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত এ স্থান যেন স্বর্গীয় অনুভূতি প্রদান করে।
ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকের স্থানগুলো ভ্রমণের জন্য বিশেষ সুবিধার হয় না, এর কারণ এখানকার এবড়োখেবড়ো রাস্তা, অবিরাম বৃষ্টি এবং পাহাড়ি পরিবেশ। তবে এসব কিছুর মাঝেও মেচুখা ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করে চলেছে। তাই শত বৃষ্টি সত্ত্বেও ম্যাকমোহন লাইনের কাছে অবস্থিত এই উপত্যকা দেখার সুযোগ অত্যন্ত লোভনীয়।
অরুণাচল প্রদেশের রাস্তাগুলো অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। নদী ও পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে অনেকের কাছেই মনে হবে তারা যেন মেঘের রাজ্যে আছেন। পাসিঘাটের পর কুয়াশায় ঢাকা ব্রহ্মপুত্রকে দেখতে পাওয়া যায়, যা এ অঞ্চলে সিয়াং নামে পরিচিত। পাহাড়ের আশেপাশে কমলার বাগান দেখতে পাওয়া যায় এখানে সেখানে। ছোট, মিষ্টি, রসালো এ ফলগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়।
সিয়াং নদীর পর সরু উপত্যকার মধ্য দিয়ে সিওম নদীকে অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হয়। অগভীর ও নুড়িযুক্ত সিওম নদীর মাঝে যেন দ্বীপের মতো দাঁড়িয়ে আছে এই সরু উপত্যকাটি। এ মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের একপাশে অবস্থিত আলো শহর, যা স্থানীয়ভাবে আলং নামে পরিচিত। কোরিয়ান খাবারসহ এ শহরে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: খনির মধ্যে ঘুমাতে চান, ঘুরে আসুন যুক্তরাজ্যের গভীরতম হোটেলে
ঐতিহ্যবাহী খড় ও বাঁশের তৈরি ঘরগুলো দেখতে পাওয়া যায় মেচুখা যাওয়ার পথে কায়িং নামক গ্রামে। এখানকার অনেক ঘরেই লাল সূর্যের ছবির সাথে সাদা পতাকা টাঙ্গানো দেখা যায়। এরা আদিবাসী ডনি পোলো ধর্মের অনুসারী। এ পতাকা তারই প্রতীক। তারা সূর্য ও চাঁদকে পূজা করে। তাছাড়া খাড়া ঢাল বরাবর বিভিন্ন মূর্তি দিয়ে সজ্জিত গীর্জা ও স্মারকও দেখতে পাওয়া যায়।
তাছাড়া ঘন চিরহরিৎ বন কিংবা আনারস ও কলার বাগানও পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। রাস্তার একদিক তাঁতো গ্রামের দিকে চলে যায়। এই জায়গার ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময়, চীনারা এই সংযোগস্থল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। বর্তমানে অবশ্য চলমান রাস্তা নির্মাণের ফলে পূর্বের রাস্তার কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।
বিভিন্ন চারণভূমি, এখানে ওখানে মালভূমি এবং প্রতিটি ঘরের ছাদে লাগানো প্রার্থনা পতাকাগুলো মেচুখা অঞ্চলের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তোলে। স্থানীয় মেম্বা ভাষায় এ অঞ্চলকে ওষুধি তুষারজল নামে অভিহিত করা হয়। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের মনে প্রশান্তি দেয়।
এসি/ আই.কে.জে/