প্রতীকী ছবি
ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম
মহান আল্লাহ তাআলা হিজরি সনের যে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন, তার মধ্যে মহররম একটি। বাকিগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ ও সফর। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনা হিসেবে মাস হলো বারোটি। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ সম্মানিত।’ (সুরা তাওবাহ, আয়াত :৩৬)
হিজরি বছরের প্রথম মাস এই মহররম। হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবে মহররম মাসকে হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। মুসলিমদের জীবনে হিজরি নববর্ষ ও এই আরবি বছরের গুরুত্ব অনেক। দুই ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় দিবস এই হিজরি মাসকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। এজন্য কিয়ামত পর্যন্ত হিজরি বর্ষের গুরুত্ব ও মর্যাদা বহাল থাকেব মুসলমানদের কাছে।
মহররম মাসে রোজা রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। আবার মহররমের রোজার মধ্যে আশুরার তথা এই মাসের ১০ তারিখের রোজার ফজিলত আরো বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবি (স.) মদিনায় এসে দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবি (স.) বললেন, এটি কী? তারা বলল, এটি একটি ভালো দিন। এই দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) রোজা পালন করেছেন। রসুলুল্লাহ (স.) বললেন, মুসা (আ.)কে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। অতঃপর তিনি রোজা রেখেছেন এবং সাওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :১৮৬৫)
আরেক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রসুল (স.)কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময়ে তা দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :১/২১৮) আশুরার রোজার ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয় নবি (স.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস :২/৩৬৮; জামে তিরমিজি, হাদিস :১/১৫৭)
আশুরার রোজায় বিশেষ দুটি পুরস্কার রয়েছে। একবার এক ব্যক্তি হজরত আলি (রা.)কে প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে; যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তখন তিনি বললেন, এই প্রশ্ন আল্লাহর রসুল (সা.)-এর কাছে জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রসুল (স.) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস :১/১৫৭)
অন্য হাদিসে নবি করিম (স.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস :১/৩৬৭; জামে তিরমিজি, হাদিস :১/১৫৮) এখন প্রশ্ন হলো, আশুরায় দুই রোজা কেন? আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে আছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো এক দিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস :১/২৪১) এ ছাড়া আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রসুল (স.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ (সহিহ মুসলিম :১/৩৫৯)
১০ মুহররম তারিখে বিভিন্ন নবি-রসুলের আমলে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগই ইতিবাচক, যে জন্য এই দিনকে শুকরিয়া দিবস হিসেবে পালন করা হতো। কিন্তু এই দিনে কারবালা প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত বরণের পর এটি সবকিছুকে ছাড়িয়ে একধরনের শোক দিবসে পরিণত হয়েছে। তাই ইসলামসম্মত উপায়ে হিজরি বর্ষ ও ১০ মহররম উভয়ের উদ্যাপনে আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ প্রয়োজন।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইসলামি গবেষক
সূত্র: ইত্তেফাক
খবরটি শেয়ার করুন