ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা রোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি, সচিব ও কলামিস্ট মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদসহ ৯১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
মঙ্গলবার (১৯ই ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, গত ১২ই ডিসেম্বর গাজীপুরের রেল লাইনের ফিস প্লেট উপড়ে ফেলা ও আজ সকালে ঢাকা বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিতে সন্ত্রাসীচক্রের অগ্নিসংযোগের ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিরোধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুরাইয়া আক্তার স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান অনুযায়ী ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামী ৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা সচেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু একটি মহল নির্বাচনকে বানচাল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ২৮ই অক্টোবর রাজধানীতে গণসমাবেশের নামে বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে একজন কর্তব্যরত নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এমনকি প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও হাসপাতালে তারা তাণ্ডব চালায়। পরবর্তী সময়ে বাসের ভেতরে ঘুমন্ত শ্রমিককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
গত ২৯ই অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি বিএনপি-জামায়াতের কর্মী সমর্থকরা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিপুল সংখ্যক যানবাহন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজিরবিহীন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি খাদ্যপণ্য বহনকারী যানবাহন, কাঁচামাল বহনকারী ট্রাক ও পিকআপও তাদের এ তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি। গত ১২ই ডিসেম্বর বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা গাজীপুরের রেল লাইনের ফিস প্লেট উপড়ে ফেলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটায়, একজন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়াসহ অসংখ্য ট্রেনযাত্রী আহত হয়। সর্বশেষ আজ ১৯ই ডিসেম্বর সকালে ঢাকা বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিতে সন্ত্রাসীচক্র অগ্নি সংযোগ করে। এ ঘটনায় চারজন নিরীহ যাত্রী নির্মমভাবে নিহত হয়। রাজনীতির নামে পরিচালিত দুর্বৃত্তদের এ ধরনের নৃশংস বর্বরতা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
আরো পড়ুন: প্রার্থীরা আন্তরিক না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট নাগরিকরা মনে করেন, এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিরোধ করে দেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। একই লক্ষ্যে দেশের একটি চিহ্নিত মহল সংবিধানের একটি নির্ধারিত ধারার অপব্যাখ্যা দিয়ে নির্বাচনের সময়সূচি পরিবর্তন করে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। চূড়ান্তভাবে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের সংখ্যা ১৮৯৬ জন। প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উৎসমুখর পরিবেশ।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, সকল বিভ্রান্তি ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশের মানুষ এখন মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উন্নয়নের ধারা অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কিন্তু একটি চিহ্নিত কুচক্রীমহল দেশের জনগণ ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। রাজনীতির আড়ালে সক্রিয় উন্নয়ন ও প্রগতিবিরোধী এ অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশের সব নাগরিককে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফলভাবে সম্পন্ন করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন