শনিবার, ২৯শে জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেটের ঘাটতি পূরণ

ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেবে সরকার

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, ৬ই জুন ২০২৪

#

ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আর বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ভাটা পরিস্থিতির মধ্যেই প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের ওপর চাপ বাড়িয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে আগের অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৬ই জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উপস্থাপনের সময় এই লক্ষ্যমাত্রার কথা জানান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এটি দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। দেশের ইতিহাসে বিশাল এই প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

আরো পড়ুন: শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা

অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এরপর সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা নেবে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে নেবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্য ১৫ হাজার কোটি টাকা, কর ছাড়া প্রাপ্তি ৪৬ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহ হবে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এমনতেই তারল্য ঘাটতিতে রয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারি ঋণ যদি অনেকাংশে বেড়ে যায়, তখন এই ঘাটতি আরও বড় আকার ধারণ করবে, যা বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে চাপ ফেলতে পারে বলে আমরা মনে করি। এই কারণেই এই বছরের ঘাটতি বাজেট মেটাতে দুটি জায়গায় গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত পুঁজিবাজার, দ্বিতীয়ত সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিপিপি মডেলের আওতায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো। এতে বিশেষ করে অবকাঠামো খাতের বৃহৎ প্রকল্পগুলোয় বাজেট বরাদ্দের বাইরে অর্থায়ন সম্ভব হবে।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ বেশি নিলে বেসরকারি খাতকে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায়, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। ঋণের টাকার যথাযথ ও সাশ্রয়ী ব্যবহার না হলে এবং বেসরকারি খাত প্রণোদনা না পেলে কর্মসংস্থান কমবে ও মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,‘শুধু ঋণ করে সরকার চালানো যাবে না। সরকারের সুদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, এটা শিগগিরই এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। রাজস্ব বৃদ্ধির চেয়ে সুদের ব্যয় বাড়ছে, এটা বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। তাই আয় বাড়িয়ে ঘাটতি কমাতে হবে।’

এইচআ/ আই.কে.জে

ব্যাংক ঘাটতি বাজেট

খবরটি শেয়ার করুন