ছবি : সংগৃহীত
খরচ বাঁচানোর ক্ষেত্রে ইতালীয়রা দারুণ সিদ্ধহস্ত। জীবনযাপনের বাড়তি খরচ বাঁচাতে প্রধান যে ৭টি উপায় তারা অবলম্বন করে চলুন সে সম্পর্কে জেনে নিই-
বাড়তি খাবার না কেনা
ইতালীয়রা প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাবার কেনে না। তাই খাবার মজুদ করে রাখার দরকারও পড়ে না। মজুদ রাখার প্রয়োজন হয় না বলে তাদের বাড়িঘরে ফ্রিজের আকারও হয় ছোট। তাঁরা মূলত টাটকা ফলমূল খেতেই বেশি পছন্দ করে। অল্প পরিমাণে টাটকা খাবার কেনার এই চল বাড়তি খরচের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
মৌসুমের ফল, সবজি মৌসুমেই খাওয়া
ইতালীয়রা সাধারণত মৌসুমভিত্তিক ফল, সবজি খেয়ে থাকে। যখন যে সবজি বা ফলের মৌসুম, তখন সেগুলোর দামও কম থাকে। আর সেই ফল, সবজি থাকে টাটকা, ভেজালমুক্ত। অন্যদিকে, মৌসুমের বাইরে ফল খেতে হলে আমদানি করতে হয়। ফলে খরচও করতে হয় বাড়তি অর্থ। তা ছাড়া, মৌসুমের বাইরের ফল গ্রিন হাউজে উৎপাদিত হয়। পুষ্টিমানও হয় কম। বেশি টাকা দিয়ে কেন কম পুষ্টির খাবার খেতে যাবেন তাঁরা? শুধু তাই নয়। ইতালীয়রা বাড়ির পাশে এক খণ্ড আবাদযোগ্য জমি পেলেই সেখানে চাষ করে। ফলে ফল ও শাকসজির চাহিদার অনেকটাই তারা নিজেরাই পূরণ করে। বাড়তি খরচও কমে যায়।
আরো পড়ুন : পেট ভরে খাওয়া ঠিক নাকি ভুল?
খাবার বাড়িতেই তৈরি করা
ইতালীয়রা বাড়িতেই বেশির ভাগ খাবার তৈরি করে থাকেন। মূলত দুটি কারণে এমনটা করে থাকে তারা।
প্রথমত, ইতালীর সব শহরে বা এলাকায় ভালো রেস্তোরাঁ ‘টেক আউট’ বা ‘ডাইন-ইনের’ সুবিধা নেই। কিছু কিছু জায়গায় আবার ভালো কোনো রেস্তোরাঁও নেই! দ্বিতীয়ত, খাবার কী দিয়ে তৈরি সে ব্যাপারে ইতালীয়রা বেশ সন্দেহবাতিকগ্রস্থ।
এই দুই কারণে ইতালীয়রা বেশির ভাগ খাবার বাড়িতেই তৈরি করে। ফলে, বাড়তি খরচটাও বেঁচে যায়। খুব কম বাইরে খায় তারা। গড়ে ৩ মাসে একবার বা এরও কম। রেস্টুরেস্টগুলোতে মূলত পর্যটকেরাই খায়।
পোশাক হস্তান্তর করে পরা
নবজাতকের জন্ম হলে তাঁর জন্য নতুন পোশাক না কিনে বয়সে বড় অন্য কোনো শিশুর ব্যবহৃত পোশাক পরানো হয়। শুধু নবজাতকই না, বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও এই রীতি। শিশুদের বৃদ্ধি বেশ দ্রুত হয়ে থাকে। দেখা যায়, প্রতি মাসেই তাদের জন্য নতুন নতুন পোশাক কেনা লাগে। কিন্তু, ইতালীতে পোশাক হস্তান্তরের এই ব্যবস্থা থাকার ফলে ঘন ঘন নতুন পোশাক কেনার বাড়তি খরচটা আর হয় না। তবে, পুরো ইতালীতেই যে একচেটিয়াভাবে এমনটা প্রচলিত—তা কিন্তু নয়।
শখের কেনাকাটা একেবারেই নয়
ইতালীর মফস্সলগুলোতে ভালো রেস্টুরেন্টের মতো ভালো চেইনশপও অপ্রতুল। তাই চাইলেই কেউ দোকানে ঢুকে এটা–সেটা কিনে আনতে পারে না। ইতালীয়দের ক্ষেত্রে ‘আসার পথে চোখে পড়ল তাই কিনে ফেললাম’, ‘হাঁটতে বের হয়ে এই বিছানার চাদরটা কিনে আনলাম’— এরকম ‘উইন্ডো শপিং’ হয় না বললেই চলে। ফলে, শৌখিন কেনাকাটার বাড়তি খরচের হাত থেকে বেঁচে যায় তাঁরা।
গাড়ির পেছনে খরচ নয়
ফেরারি, ল্যাম্বরগিনি কিংবা মাসেরাতি—বিলাসবহুল গাড়ির ব্রান্ডের অনেকগুলোই ইতালিতে তৈরি হয়। আদতে ইতালীয়রা এইসব দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি খুব একটা ব্যবহার করে না। মূলত রপ্তানি করে। ব্যবহারের জন্য তাঁদের পছন্দ পুরোনো ক্লাসিক মডেলের যেকোনো গাড়ি। গাড়িতে ইতালীয়রা বিলাসিতা খোঁজে না। গাড়ি দিয়ে পরিবহনের কাজটুকু হলেই তাঁরা খুশি।
গাড়ির জন্যে বাড়তি কোনো খরচও তারা করে না। কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে কেবল সেটুকুই মেরামত করে। তবে, ওই মেরামত পর্যন্তই। মেরামতের বদলে যন্ত্রাংশ পরিবর্তনে তাদের বেশ আপত্তি। দশকের পর দশক ধরে একটা গাড়ি ব্যবহার করতে পারে তারা। একেবারে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়লেই নতুন গাড়ি কেনার পথে পা বাড়ায় ইতালীয়রা।
ক্রেডিট কার্ডের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা
ইতালীতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ইচ্ছামতো খরচের সুযোগ নেই। ব্যাংক ব্যালেন্সের সঙ্গে ক্রেডিটের ব্যালেন্সের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। তবেই খরচ করতে পারবে। ফলে, ক্রেডিট কার্ডে মূল্য পরিশোধ করতে ঋণ করারও প্রয়োজন পড়ে না। যতটুকু অর্থ পরিশোধ করতে পারবে, ততটুকুই খরচ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট ক্রেডিট কার্ড দিয়ে।
এস/ আই.কে.জে
খবরটি শেয়ার করুন