সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** হায়দরাবাদে বাংলাদেশি কিশোরী উদ্ধার, বেরিয়ে আসছে ভারত–বাংলাদেশ মানব পাচার চক্রের তথ্য *** হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন *** বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রাখাইন সীমান্তে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গা *** অধ্যাপক আবুল বারকাতের জামিনে মুক্তি চেয়ে ১২২ নাগরিকের বিবৃতি *** যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের প্রস্তাবের ‘পক্ষে’ ট্রাম্প *** অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়ে তোলা ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান *** বাংলাদেশ যাতে মৌলবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়: তারেক রহমান *** আওয়ামী লীগের সরকারের বিষয়ে জুলাই সনদে দাবিটা অতিরঞ্জিত: ডেভিড বার্গম্যান *** সাড়ে ৫ মাস পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি *** পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার শর্তে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস

ময়মনসিংহে ৩২৬ বছর আগের মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, ১৪ই আগস্ট ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকায় ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ৬ই আগস্ট পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি প্রতিনিধি দল ১৬৯৯ সালে নির্মিত প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটি পরিদর্শন করেন এবং তা দ্রুত সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদনের ঘোষণা দেন।

পরিদর্শন শেষে পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ইউরোপে ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুদ্রণ শিল্পের প্রসার ঘটে। বিশেষ করে ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান উদ্ভাবক জোহানেস গুটেনবার্গের ধাতব চলনশীল অক্ষর ব্যবহার করে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশে ছাপাখানার প্রসার ঘটে পর্তুগিজদের হাত ধরে।

১৫৫৬ সালে গোয়ায় পর্তুগিজরা প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করেন। এরপর ধীরে ধীরে এই প্রযুক্তি ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুদ্রণ শিল্প প্রসারিত হতে থাকে। যার প্রভাব প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহেও পড়ে।

ইমতিয়াজ বলেন, ‘এই মুদণযন্ত্রটি ১৬৯৯ সালে নির্মিত, যা মুদ্রণ শিল্পের অনন্য নিদর্শন। পূর্ব প্রজন্মের প্রগতিশীল মানুষদের হাত ধরে এই প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটির ময়মনসিংহে আগমন ঘটে।’

পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গবেষক স্বপন ধর বলেন, ‘‘গবেষণা করতে গিয়ে যে বিষয়টি পাওয়া গেছে, ১৮৬৬ সালের দিকে হরচন্দ্র চৌধুরী শেরপুর থেকে মুদ্রণযন্ত্রটি ময়মনসিংহে নিয়ে এসেছিলেন। তারপর ১৯৪৭ সালে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অনাথ বন্ধু গুহ তার প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় সেই মুদ্রণযন্ত্রটি ব্যবহার করতেন। তিনি কয়েক বছর ব্যবহারের পর গফরগাঁওয়ের মাওলানা পাঁচবাগীর পীর সাহেবের হাতে ছাপাখানার দায়িত্ব চলে যায়; যা চলমান থাকে স্বাধীনতার পর পর্যন্ত। সেখান থেকে ‘চাষি পত্রিকা’সহ রাজনৈতিক পোস্টার ছাপানো হত।”

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ ছাপাখানাটি কারা পরিচালনা করতেন, তা বের করার কাজ চলছে। তবে আমরা চাই, যেহেতু মুদ্রণযন্ত্রটি পুরাকীর্তির নিদর্শনস্বরূপ, তা সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ‘

মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুদ্রণযন্ত্রটির দুটি অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছাপাখানার জায়গাটিও অরক্ষিত। তবে ছাপাখানাটি কবে বন্ধ হয়েছে, স্থানীয়রা এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।

ময়মনসিংহের স্থানীয় দৈনিক আজকের খবর পত্রিকার সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে ছাপাখানাটির নাম ছিল ‘চাষি ছাপাখানা’। সাপ্তাহিক চাষি পত্রিকাটিও সেখান থেকে প্রিন্ট করা হত। বিভিন্ন সময়ে ছাপাখানা হাত বদল হয়েছে। সবশেষ এ টি এম নুরুদ্দীনের তত্ত্বাবধানে ছিল ছাপাখানাটি।

কবি শামসুল ফয়েজ বলেন, ছাপাখানাটি থেকে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকা বের করতেন এ টি এম নুরুদ্দীন। সেখানে আমার যাওয়া-আসা ছিল। সেই ছাপাখানাটি ৩০-৩৫ বছর আগে ছিল। এরপর নুরুদ্দীন সাহেব মারা গেলে তার ছেলে-মেয়েরা আমেরিকায় স্থায়ী হয়। পরে আর পত্রিকা বের হয়নি। ছাপাখানাটিও বন্ধ হয়ে যায়।

মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডের চা দোকানি সুশীল চন্দ্র দে বলেন, ১৯৯৭ সালে বাবার হাত ধরে ময়মনসিংহ আসি। তখন থেকেই মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে বসবাস করছি। শুরুতে ২০ টাকা দিয়ে বাবা আর আমি বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করি। এখন আমার বাসা ভাড়া আট হাজার। ১৯৯৭ সালে এসে দেখি মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে টিনের চৌচালায় ছাপাখানা চলছে। এর কয়েক মাস পর থেকে অবশ্য সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ছাপাখানার কয়েকশ গজ দূরে একটি পত্রিকা অফিস ছিল। সেটিও এখান বের হত।

ময়মনসিংহ মুদ্রণযন্ত্র

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন