বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমাতে জেলা শহরে নাগরিক সুবিধা বাড়াতে হবে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:৫১ অপরাহ্ন, ৫ই জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। ১৩৪ বর্গমাইল আয়তনের ঢাকায় জনসংখ্যা দুই কোটিরও বেশি। এখানে প্রতি বর্গমাইলে ১ লাখ ১৫ হাজার লোকের বেশি বাস করে এবং প্রতিদিনই নতুন করে যোগ হচ্ছে। এই বর্ধিত জনসংখ্যা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং যাতায়াতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঢাকার যানবাহনেরও সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ অনুসারে ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। রাজধানীতে মানুষের বসবাসের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ২০১৮ সালে ঢাকা ছিল বিশ্বের জনবহুল  শহরের তালিকায় ৭ নম্বরে।মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে এখন ৪ নম্বরে।ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশেরও বেশি। এই বিশাল মানুষের বোঝা বইতে পারছে না ঢাকা। এর প্রভাব পড়ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। যার কারণে  দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নগরজীবন। ঢাকার অলিগলিতে, রাস্তাঘাটে, পাড়ায়-মহল্লায় সব জায়গায়ই লোকে লোকারণ্য। মনে হবে, তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

অনেক আগেই রাজধানী শহর ঢাকা সুন্দরভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। বায়ু দূষণেও দূষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রথম দিকেই স্থান করে নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই  দূষণের নগরী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ধুলায়, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পুরো শহর। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বায়ু দূষণের সাথে সাথে শব্দ দূষণেও নাজুক অবস্থা। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যামের কারণে দশ মিনিটের হাঁটার পথও পার হতে অনেক সময় কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। মানুষ চাইলেই সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। কর্মঘণ্টা রাস্তায়ই শেষ হয়ে যায়।

আরো পড়ুন : সড়ক দুর্ঘটনার দায় রাষ্ট্র ও জনগণ-কেউ এড়াতে পারে না

চারশ বছরের পুরোনো এই শহরকে এক সময় তিলোত্তমা শহর বলা হতো। কালের পরিক্রমায় সেই শহর আজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দিনে দিনে আয়তন যতটুকু বাড়ছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ জনসংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম মেগাসিটিতে পরিণত হবে ঢাকা।

নানা সংকটে জর্জরিত নগরবাসীর নাভিশ্বাস চরমে উঠছে। যানজট, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট, মাদকের আগ্রাসন, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মশার উপদ্রব প্রভৃতি সমস্যা নগরবাসীকে  অতিষ্ঠ করে তুলেছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন, ছিন্নমূল বস্তিবাসী সবাইকে একধরনের অস্থিরতা, অতৃপ্তি, অশান্তি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে। এত সমস্যা, সংকট, অস্বস্তি, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তার পরও প্রতিদিনই কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে  গ্রাম-শহর ছেড়ে অগণিত মানুষ আসছে। ফলে উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে ঢাকার জনসংখ্যা।

অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষের চাপ, যা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকার চাপ কমাতে হলে সুনিপুণ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। জেলা শহরগুলোতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। গ্রামে শহরের নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামাঞ্চল এবং ছোট শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্পের বিস্তার ঘটিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে রাজধানীর ওপর অতিরিক্ত জনংসখ্যার চাপ স্বাভাবিকভাবে কমে আসবে। রাজধানী ঢাকাকে নিয়ে এখনই ভাবার সময়। নইলে এক সময়ের গৌরব-ঐতিহ্যের ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান করে নেবে।

এস/ আই.কে.জে/ 

 


ঢাকামুখী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন