বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সড়ক দুর্ঘটনার দায় রাষ্ট্র ও জনগণ-কেউ এড়াতে পারে না

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:২৭ অপরাহ্ন, ৪ঠা জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি - সংগৃহীত

দেশব্যাপী হঠাৎ করে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রতিবছর শীতকালে অন্যান্য সময়ের চেয়ে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। এ বছরও শীতের শুরুতেই অনেক বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মতো নিরাপদ মহাসড়কেও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো 'মৃত্যুকূপে' পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতিকে কেউ খুব একটা বড় করে দেখছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে। সড়ক দুর্ঘটনাকে নিয়তির বিধান হিসেবে সবাই মেনে নিচ্ছে। অথচ প্রতিদিনই সারা দেশে ঘণ্টায়-ঘন্টায় রাস্তায় তাজা প্রাণ ঝরে পড়ছে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর  হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা 'নিয়মিত ও স্বাভাবিক' ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর কোথাও কোথাও তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এজন্য তদন্তের আড়ালে বারবার জবাবদিহির বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনার  দায় রাষ্ট্র ও জনগণ-কেউই এড়াতে পারে না।

বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৫ জন এবং প্রতি বছর গড়ে ২৪ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। প্রতি বছর ৩ লক্ষাধিক মানুষ আহত এবং প্রতিবন্ধী হয় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬০ হাজার ৯৮০টি, যাতে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৩৮ জন নিহত এবং ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন আহত হয়েছে। এই সকল পরিসংখ্যান সড়কের বেহাল পরিস্থিতির কথাই  প্রমাণ করে দেয়।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো চালকের অসতর্কতা ও অদক্ষতা। চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে চালকরা মাদকাসক্ত থাকে বা বিশ্রামের অভাবে তন্দ্রাছন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া গাড়ির ফিটনেস ত্রুটি, অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, রাস্তার নকশায় ত্রুটি, মহাসড়কে ধীরগতির গাড়ি ঢুকে পড়া, সড়কের খানাখন্দ দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। আবার অনেক ক্ষেত্রে পথচারীরা ট্রাফিক আইন না মানার কারণেও দুর্ঘটনা হয়ে থাকে।

উন্নত বিশ্বে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। সেখানে ট্রাফিক আইন মেনে চলা, ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে না দেয়া, প্রকৃত চালককে লাইসেন্স দেয়া হয়। কিন্তু এদেশে অধিকাংশ গাড়িরই ফিটনেস নেই। টাকা দিলেই গাড়ির লাইসেন্স দেয়া হয়। তাকে কোনো প্রকার পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অধিকাংশ ড্রাইভারই হেলপারিং করতে করতে ড্রাইভার হয়ে যায়। তাকে আলাদা করে কোনো প্রশিক্ষণ নিতে হয় না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এই সব কারণে দেশে নিবন্ধিত যানবাহন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা যেমন বেড়ে চলছে, তেমনিভাবে রাস্তায় হাজারো লক্কর-ঝক্কর গাড়ি বাড়ছে। এসব যানবাহনের যত্রতত্র চলাচলও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

বিশ্বব্যাপীই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সেটা এদেশের মতো কোথাও নয়। সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য শুধু চালককে দোষ দিলে হবে না। বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, সওজসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, উদাসীনতা ও অবহেলা সমভাবে দায়ী। যানবাহনের রুট পারমিট, ফিটনেস, চালকের উপযুক্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি ইস্যুর পাশাপাশি এই সকল ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সড়ক ব্যবস্থাপনায় যানবাহনে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। দূরপাল্লার যানবাহনের চালকদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা, প্রতিটি চালকের ডোপ টেস্ট নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে গাড়ি চালাবার সময় চালক মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।
 
এ বছর শীতের শুরুতেই অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখনই সাবধান না হলে পুরো শীতে মৃত্যুর মিছিল আরো দীর্ঘ হবে। পরিস্থিতির উন্নতিতে সড়ক আইনের যথাযথভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। চালক ও যাত্রীদেরও আরো সচেতন হতে হবে।
 
আই.কে.জে/ 

রাষ্ট্র ও জনগণ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন