সোমবার, ৪ঠা আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** নতুন সংবিধান রচনার ঘোষণা এনসিপির *** জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা থেকে ৮ জনের নাম বাদ *** বাংলাদেশকে ১৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি *** স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টাকে কমিশন সভাপতির চিঠি *** বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিডনিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে লাখো মানুষ *** এনসিপির ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা *** তিন দশকের রাজনীতিতে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই শক্তিশালী নারী: মাহফুজ আনাম *** সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন *** তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক: তারেক রহমান *** গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

তিন দশকের রাজনীতিতে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই শক্তিশালী নারী: মাহফুজ আনাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:১৬ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, 'গত তিন দশকের রাজনীতিতে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই শক্তিশালী নারী–খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী, যথাক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসন ও আওয়ামী লীগের সভাপতি)। তবু নারীদের অধিকার এখনো বাস্তবায়ন হয়নি এবং তাদের (নারীদের) অবদান মূলত স্বীকৃত হয়নি।'

তিনি বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যার উদ্ভাবিত মাইক্রোক্রেডিট ব্যবস্থা তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতির পাশাপাশি নোবেল শান্তি পুরস্কারও এনে দিয়েছিল এবং যিনি প্রায় সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নেই মনোনিবেশ করেছিলেন, তিনিই এখন একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ সামান্য এবং এর সম্ভাব্য সুফল আরও কম।'

সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যের প্রসঙ্গে এক লেখায় মাহফুজ আনাম এসব কথা বলেন। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'তবে নারী আসন নিয়ে সমঝোতাটা বেশ হতাশাজনক। আগের মতোই ৫০টি সংরক্ষিত আসনের বিধান বহাল থাকছে। নতুনভাবে ঐকমত্য হয়েছে যে, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের অন্তত পাঁচ শতাংশ নারী হতে হবে।'

তিনি উল্লেখ করেন, 'বাস্তব অর্থে, এটা তাৎপর্যপূর্ণ কিছু না। যদি নির্দিষ্ট নারী-সংরক্ষিত আসনের বিধান না থাকে, তাহলে নারী প্রার্থীদের পুরুষ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, যা ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষদের জয়েই শেষ হয়। মোট আসনের হিসাব বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য ফলাফল জেনে, সব রাজনৈতিক দল, বিশেষত বড় দলগুলো নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে তাদের সবচেয়ে দুর্বল আসনগুলোতে।'

ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক উপসম্পাদকীয়তে তিনি এসব কথা বলেন। তার লেখা গত শুক্রবার (১লা আগস্ট) পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, রাজনীতিতে আগের মতো আর দুই নেত্রীর প্রসঙ্গটি আলোচনায় নেই। ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাভাবে অভিযুক্ত হচ্ছেন। গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত অবমাননার এক মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডও দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অনেকে কারাগারে আছেন, কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন, বাকিদের অবস্থান দলটির নেতাকর্মীদের জানা নেই। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে আছেন, তিনি দলটির ঐক্যের প্রতীক। দলটি এখন নানা কারণে জনপ্রিয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দলটির নেতৃত্বে সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০০৭ সালে এক এগারোর জরুরি অবস্থার সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তখনো দেশের দুই প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারাবন্দী করার পর রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র আলোচনা জোরদার হয়েছিল। তবে ওই সরকার শেষ পর্যন্ত দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে 'মাইনাস' করতে পারেনি।

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাব প্রসঙ্গে মাহফুজ আনাম উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, "এটা নারীদের প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তাদের প্রশ্নাতীত ত্যাগ এবং ব্যাপক ও কার্যকর অংশগ্রহণ ছিল। এই নতুন বাংলাদেশে, 'নতুন বন্দোবস্তে' নারীদের সংসদীয় প্রতিনিধিত্বে আদতে নতুন কিছুই নেই। লক্ষণীয় যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছিলেন পুরুষ এবং কমিশনের কোনো নারী সদস্যও ছিলেন না।"

তিনি বলেন, 'এক বা দুজন নারী সামান্য সময়ের জন্য অংশ নিয়েছিলেন মাত্র। ফলে দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটারের কোনো কার্যকর প্রতিনিধিত্বই সংস্কার প্রণয়নের সময় ছিল না। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ছিল সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংস্কার কমিশন, যার সুপারিশগুলো প্রায় উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। যদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রার সূচনা করে, তবে সেটি শুরু হবে নারীকণ্ঠ অনুপস্থিত রেখেই।'

তিনি লেখেন, 'দীর্ঘ কয়েক মাস হতাশার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) আলোচনায় যথেষ্ট ভালো খবর এসেছে, যা আমাদের আনন্দিত করেছে। বৃহস্পতিবার (৩১শে জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১৬টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, যার কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু দল ভিন্নমত জানালেও বিরোধিতা করেনি। ২০শে মার্চ থেকে ১৯শে মে পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠক এবং ২রা জুন থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দলের সঙ্গে ২৩টি বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন কিছু উল্লেখযোগ্য ফলাফল আনতে পেরেছে।'

মাহমুদ আনাম বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে না যায়, তাহলে সেগুলো আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।'

তিনি আরো বলেন, 'যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো—নিম্নকক্ষের নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে (পিআর) সংসদের একটি উচ্চকক্ষ গঠনের অনুমোদন। এটি আমাদের সংসদের কার্যক্রম ও রাজনৈতিক গতিপথে একটি গুণগত পরিবর্তন আনবে, যা চাটুকারিতা ও সস্তা বাগাড়ম্বরের পরিবর্তে পরিপক্বতা ও গভীর বিশ্লেষণের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।'

সাংবাদিক মাহফুজ আনাম

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন