মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্প আমলে বাংলাদেশ–আমেরিকার সম্পর্ক কেমন?

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৮:০৪ অপরাহ্ন, ১৫ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও আলোচনার বিষয় ছিল- সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন হবে। ট্রাম্প চলতি বছরের ২০শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। দ্বিতীয় দফায় তার দায়িত্ব গ্রহণের এখনো তিনমাস পূর্ণ হয়নি। বাংলাদেশের প্রতি তার সরকারের নীতি কী হবে, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। 

ট্রাম্প এবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমেরিকার বিদেশনীতি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সারা বিশ্বে। এর মধ্যে অনেক দেশে ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় আমেরিকার আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। 

ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। তার এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

যদিও ‘পাল্টা শুল্ক’ কার্যকর হওয়ার দিনেই শুধু চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ তিন মাস ১০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে সেসব দেশকে। তিন মাস পর বাংলাদেশি পণ্যের ‘পাল্টা শুল্কের’ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা এখনো অজানা। 

অন্যদিকে আমেরিকার দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনদিনের সফরে আগামীকাল বুধবার (১৫ই এপ্রিল) ভোরে ঢাকায় আসছেন। বুধবার প্রথমে ঢাকায় পৌঁছাবেন আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক।

পরে আরেকটি ফ্লাইটে আসবেন আমেরিকার পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হেরাপ।  প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রথম বাংলাদেশ সফর। তাদের এ সফর ঘিরে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা আশাবাদী। 

জানা গেছে, বাংলাদেশ সফরের সময় নিকোল চুলিক অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংস্কারপ্রক্রিয়া, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে আমেরিকার সহায়তা নিয়ে আলোচনা করবেন। চলমান সংস্কার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সময় আমেরিকা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, তা জানতে চাইবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে দেশটির উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রতিনিধিদলের প্রথম বাংলাদেশ সফর। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রাসঙ্গিকভাবে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।’

আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি এম হুমায়ুন কবীর মনে করেন, ‘আমেরিকার প্রথাগত মিত্র যারা আছে, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো, কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের একটি পুনঃবিন্যাস ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় আমলে ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’

ট্রাম্পের আমলে বাংলাদেশ–আমেরিকার সম্পর্ক কেমন হবে? বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ডেনিলোভিচ গত মার্চ মাসে ঢাকা সফরে এলে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিষয়টি বলার মতো সময় এখনো আসেনি। আর আমেরিকার ক্ষমতার সবকিছুই প্রেসিডেন্টের হাতে নয়। কংগ্রেসসহ আরও কিছু বিষয় সেখানে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নীতি গ্রহণ করেছেন, সেগুলোর বেশিরভাগই আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তেমন যোগসূত্র নেই।’

ঢাকায় সফর কালে  আমেরিকার সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, ‘ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধের বিষয়টি মূলত আমেরিকার অভ্যন্তরীণ। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কোনো যোগ নেই। অভ্যন্তরীণ কারণেই সীমান্ত নিরাপদ রাখতে অভিবাসননীতি নেওয়া হয়েছে। কাজেই আমেরিকার নতুন এসব নীতি ও পদক্ষেপের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে লক্ষ্যে রেখে বা বাংলাদেশের জন্য নয়।’

সাবেক এ উপরাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে উগ্রবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অনেক অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে উগ্রবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সমালোচনাগুলোকে সত্য দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। মিথ্যাকে মিথ্যা দিয়ে নয়, সত্য দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।’

‘ডিপ স্টেট’ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জন এফ ডেনিলোভিচ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে কাজ করার জন্য যদি বিভিন্ন পদ্ধতি নেওয়া হয়, সেটা ডিপ স্টেট নয়, সেটা রাষ্ট্রের নীতি। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশে অনেক অপতথ্য আছে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনে আমেরিকা সহযোগিতা করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা নাকচ করে দিয়েছেন—দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ভালো ইঙ্গিত। বাংলাদেশের জন্য আমেরিকার সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি মনে করেন, ‘এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্ক চ্যারিটি (দান–খয়রাত) নয়। আমেরিকা কিংবা চীন—সব দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়। সম্পর্ক আরও উন্নত হলে দুই দেশ থেকেই বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ আসবে। গণতান্ত্রিক দুর্বলতায় এত দিন যা কাজে আসেনি। গণতান্ত্রিক ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আমেরিকার উদ্যোক্তাদের আরও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

এইচ.এস/


বাংলাদেশ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন