ছবি: সংগৃহীত
ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনামের মূল্যায়নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো ‘যুক্তিসঙ্গত, পরিণত ও অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য’। তিনি বলেছেন, আজ সবাই বিএনপির দিকে তাকিয়ে। তারেক রহমান সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি সবচেয়ে বেশি সংসদীয় আসন পাবে। দলটি আমাদের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অপমান-অবিচার করেছেন। এর উত্তরে প্রতিহিংসামূলক ভাষার জন্ম না দিয়ে তারেক রহমান রাজনৈতিক আলোচনা ও বিতর্ককে একটি নতুন মর্যাদা দিয়ে চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে মনে করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ আনাম।
একইসঙ্গে তিনি তারেক রহমানের কাছে কিছু বিষয়ে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির জন্য একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক, উদ্ভাবনী ভাবনাসম্পন্ন ও ভবিষ্যতমুখী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের এখনই উপযুক্ত সময়। তাদের (বিএনপি) হতে হবে জনআকাঙ্ক্ষা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের নতুন প্রত্যাশা ও একবিংশ শতকের চাহিদার সঙ্গে মানানসই।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়ার জন্য আমরা তারেক রহমান ও বিএনপিকে সাধুবাদ জানাই। তার বক্তব্যগুলো আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত ও পরিণত মনে হয়েছে। অত্যাচারকারীর ওপর প্রতিশোধ নয়, সংস্কার চাই বলে গত বুধবার (২৩শে এপ্রিল) তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য। ব্রিটেনে বাধ্যতামূলক নির্বাসনের সময়টা তিনি (তারেক রহমান) যথাযথভাবে কাজে লাগিয়েছেন বলেই মনে হয়। ভাষার ব্যবহারে তিনি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া- দুজনই যে সংযম দেখিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য।’
তার মতে, ‘আওয়ামী লীগ ও ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা তাদের (খালেদা জিয়া, তারেক রহমান) প্রতি যে অপমান ও অবিচার করেছেন, তা সহজেই প্রতিহিংসামূলক ভাষার জন্ম দিতে পারত। কিন্তু তারা তা করেননি এবং রাজনৈতিক আলোচনা ও বিতর্ককে একটি নতুন মর্যাদা দিয়ে চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
গতকাল শুক্রবার (২৫শে এপ্রিল) ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক কলামে মাহফুজ আনাম এসব কথা বলেন। কলামটি ‘দ্য এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম নো ওয়ান ইজ টকিং অ্যাবাউট' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। বৃহস্পতিবার (২৪শে এপ্রিল) রাত থেকে পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে পাঠকরা লেখাটি পড়তে পারছেন। ওই রাত থেকেই কলামটি নিয়ে ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। অনেক পাঠক ‘চুলচেরা’ বিশ্লেষণও করছেন।
বিএনপির বর্তমান গঠনতন্ত্রের চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্বের ১ ও ৪ নম্বর ধারায় সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে মাহফুজ আনাম লেখেন, ‘আমাদের অনুরোধ, তিনি (তারেক রহমান) যেন তার হাতে থাকা দলীয় কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার বাস্তবতা উপলব্ধি করেন এবং দলীয় কাঠামোর ভেতরে বিকল্প মত বা এমনকি ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করেন—যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো হুমকির মুখে না পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলতে পারেন, এমন সুযোগ দিলে শৃঙ্খলাভঙ্গের ঝুঁকি তৈরি হবে। হ্যাঁ, সেটা হতে পারে। কিন্তু, এ সুযোগ না থাকলে দলে কোনো সৃজনশীলতা ও উদ্দীপনা থাকবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে শুধু জন্ম নেবে মোসাহেব। আমরা দেখেছি, এ কারণেই আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা (আওয়ামী লীগের সভাপতি) শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই ধ্বংস করেননি, তিনি গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী নিজের দলটিকেও ধ্বংস করে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং এখন তার কাজের মধ্যে অন্যতম হওয়া উচিত, দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।’
তিনি লেখেন, ‘আজ সবাই বিএনপির দিকে তাকিয়ে, তাদের নিয়ে আলোচনায় এবং দলটিকে আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টায়। ইতিহাস তাদের জন্য এমন দ্বার উন্মোচন করে দেবে, তাও আবার এত দ্রুত—সেটা কেউ কল্পনাও করেননি। এখন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, সেটাই ধরে নেওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘শুধু নিজেদের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এমনটা হবে, তা নয়। এমন কিছু হবে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণেও। এ জন্যই আজ আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বিএনপি এবং দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমান। কেননা, দলটি আমাদের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্য টানা সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ এবং একবার বিরতি দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের সুযোগ রাখার যে প্রস্তাব তারেক রহমান দিয়েছেন, তা বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে ভালো। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর যে চিন্তা তিনি প্রকাশ করেছেন, সেটাও ইতিবাচক। একটি উচ্চকক্ষ গঠনের ধারণাও অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু, এর সদস্যপদ যদি যথাযথ অনুপাতে নির্ধারণ না হয়, তাহলে সেটাও নিম্নকক্ষের মতোই হয়ে যাবে এবং সরকারকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার কাজটিও বাধাগ্রস্ত হবে।’
এইচ.এস/