সোমবার, ২১শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসে এই প্রথম পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে একটি দেশের রাজধানী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, ২১শে জুলাই ২০২৫

#

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পানির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে এক শিশু। ছবি: সিএনএন

পানির গাড়ি আসার শব্দ শুনলেই প্রতিদিন ৪২ বছর বয়সী রাহিলা বালতি আর কনটেইনার নিয়ে ছুটে যান রাস্তায়। কারণ, দেরি করলে কিছুই জুটবে না। তিনি বলেন, ‘পানি পাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এটা এখন আমাদের জীবন-মরণের প্রশ্ন।’

রোববার (২০শে জুলাই) আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, আধুনিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি রাজধানী শহর পুরোপুরি পানিশূন্য হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। রাহিলা সেই শহরেরই বাসিন্দা। ভয়াবহ এই সংকট তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে। এখানে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় প্রতিটি পরিবারের পানির জন্য সংগ্রাম।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা মার্সি কর্পসের মতে, কাবুল এখন এমন এক অবস্থায় রয়েছে, যা শুধু পানি নয়—এটি স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও মানবিকতার জটিল সংকটে।

গত তিন দশকে কাবুলের জনসংখ্যা ২০ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৫০ লাখের ঘরে পৌঁছেছে। বাড়তি এই জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে শহরের প্রায় অর্ধেক কূপ ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে। প্রতিবছর কাবুলে ৪ কোটি ৪০ লাখ কিউবিক মিটার বেশি পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতি এই শূন্যতা পূরণ করতে পারছে না।

মার্সি কর্পসের তথ্যমতে, কাবুলের ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত। এর কারণ অপ্রশিক্ষিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও শিল্পবর্জ্য। ফলে ডায়রিয়া, বমির মতো রোগ সেখানে ছড়িয়ে পড়ছে।

পানির সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন নারী ও শিশুরা। অনেক নারীকে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে পানি আনতে হয়। তা-ও আবার তালেবানের বিধিনিষেধের মধ্যে একজন পুরুষ অভিভাবক ছাড়া তাদের বাইরে যাওয়াও নিষিদ্ধ। এক তরুণী বলেন, ‘একজন মেয়ের একা রাস্তায় পানি আনতে যাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব। পথে হেনস্তা হওয়া এখন সাধারণ বিষয়।’

শিশুরাও এখন স্কুল ফাঁকি দিয়ে পানি আনতে যায়। ভারী বালতি টেনে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের। এই প্রবণতা দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বৃত্তকে আরও গভীর করে তুলছে।

ভয়াবহ এই সংকটের মধ্যে আমেরিকার সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়াও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে পানি ও স্যানিটেশন খাতে যেখানে ২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার প্রয়োজন, সেখানে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮০ লাখ ডলার তহবিল এসেছে।

জে.এস/

আফগানিস্তান কাবুল পানি সংকট

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন