সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোবর থেকে যে নিয়মে জৈব সার তৈরি করবেন

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য পেতে মাটিতে জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর কোনো বিকল্প নেই। তাই বর্তমানে জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর প্রকৃক্রিয়া জনপ্রিয় হচ্ছে।

মাটির গঠন ও গুণাগুণ ঠিক রাখতে হলে জৈব সার ব্যবহার করে মাটিকে উৎপাদনক্ষম করতে হবে। তাই জৈব সার তৈরি ও সংরক্ষণের ব্যাপারে কৃষকদের যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

এতে করে নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে প্রায় বিনা খরচে জৈব সার পাওয়া যায়। নিজস্ব শ্রম ও গৃহস্থলী কাজকর্ম থেকে পাওয়া যায় খড়কুটা লতাপাতা, কচুরিপানা, ছাই ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা।

গরুর গোবর, বাড়িঘর ঝাড়ু দেয়া আবর্জনা ইত্যাদি পচিয়ে বা সংরক্ষণ করে প্রত্যেক কৃষক বাড়িতে ছোটখাটো একটি সার কারখানা গড়ে তুলতে পারে।

এই জৈব সার ব্যবহারেমাটির উৎপাদিকাশক্তি যেমন ঠিক থাকবে ঠিক থাকবে অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীলতাও কিছুটা হ্রাস পাবে।

যেভাবে গোবর সার সংরক্ষণ করবেন-

গরুর মলমূত্র একত্রে মিশিয়ে ও পচিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাই গোবর সার। এই সার দেশের কৃষকের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও উন্নতমানের সার। এত অধিক পরিমাণ জৈব সার অন্য কোনো গৃহপালিত পশুপাখি থেকে পাওয়া যায় না। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এই মূল্যাবান সারের বিরাট অংশ বিনষ্ট হয়ে থাকে।

গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় অযত্ন ও অনিয়মে গোবর একত্র করে রাখা হয়। অনেকে গর্ত করে গোবর সংরক্ষণ করেন ঠিকই কিন্তু উপরে আচ্ছাদন না থাকায় রোদ ও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়।

কাজেই এভাবে যে সার তৈরি করা হয় তা মাটি বা ফসলের জন্য কোনো কাজে আসে না। এ ছাড়া আজকাল গোবরকে জ্বালানি হিসেবেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জমিতে সারের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। অথচ এই গোবরকে বায়ো-গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করার পরেও সার হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

সরাসরি গোবরকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার ফলে এক-তৃতীয়াংশ গোবর সার বিনষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন যেটুকু গোবর পাওয়া যায় তা সযত্নে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ কাঁচা গোবর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা ঠিক নয়। আবার সাধারণত গোবর জমা করে রাখলেও সারের গুণগত মান নষ্ট হয়।

উন্নত পদ্ধতিতে যেভাবে গোবর সারতৈরি করবেন-

গোয়াল ঘরের কাছাকাছি সামান্য উঁচু স্থান বেছে নিয়ে ১.৫ মিটার চওড়া, ৩ মিটার লম্বা ও ১মিটার গভীর গর্ত তৈরি করুন। গোবরের পরিমাণ বুঝে গর্ত ছোট, বড় বা একাধিক গর্ত করতে পারেন।

গর্তের তলা ভালোভাবে পিটিয়ে সেখানে খড়, কাঁকর, বালি বিছিয়ে নিন যাতে পানি সহজে শুষে নিতে পারে অথবা গর্তের তলা এবং চারপাশে গোবর দিয়ে ভালোভাবে লেপে নিতে পারেন। গর্তের চারদিকেই তলদেশের দিকে একটু ঢালু রাখতে হবে এবং গর্তের উপরে চারপাশে আইল দিয়ে উঁচু করে রাখতে হবে যেন বর্ষার পানি গর্তে যেতে না পারে।

গর্তের পাশ থেকে গোবর ফেলে গর্তটি ভরতে থাকুন অথবা গর্তটিকে কয়েকটি ভাগেভাগ করে কয়েক দিনে এক একটি অংশ ভরে পুরো গর্ত ভরাট করা ভালো।

গর্তে গোবর ফেলর ফাঁকে ফাঁকে পুকুর বা ডোবার তলার মিহি মাটি ফেলুন, এতে স্তর আঁটসাট হয় এবং সার গ্যাস হয়ে উবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

প্রায় দেড় মাস পর সারের গাদা ওলটপালট করে দিতে হবে। যদি গাদা শুকিয়ে যায় তবে গোমূত্র দিয়ে ভিজিয়ে দিন কারণ, গোমূত্রও একটি উৎকৃষ্ট সার।

আরো পড়ুন: ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষাবাদে লাভবান হচ্ছেন ছোট চাষিরা, কম খরচে বেশি ধান

গোবরের সাথে টিএসপি ব্যবহার করলে জৈব সারের মান ভালো হয়। গোবরের গাদার প্রতি টনের জন্য ১৫ থেকে ২০ কেজি টিএসপি ব্যবহার করতে পারেন।

কড়া রোদে গোবর যেন শুকিয়ে না যায় আবার বৃষ্টিতে ধুয়ে না যায় সে জন্য গাদার ওপরে চালা দিয়েদিন। খড়, খেজুর পাতা কিংবা তালপাতা দিয়ে কম খরচে এই চালা তৈরি করতে পারেন।

এমনিভাবে সংরক্ষণের ২ মাসের মধ্যেই গোবর পচে উত্তম মানের সার তৈরি হয় যা পরবর্তীতে জমিতে ব্যবহার করার উপযোগী হয়। জৈব সার ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভশীলতা কমিয়ে আনুন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সচেষ্ট হন।

এম এইচ ডি/

গোবর জৈব সার বাংলাদেশ সার তৈরির নিয়ম ফসল

খবরটি শেয়ার করুন