প্রতীকী ছবি
নিঃসন্দেহে কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। আর এর আলামত বা নিদর্শন প্রতিনিয়ত প্রকাশ পেয়ে আসছে। পৃথিবীর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে, কেয়ামতও ঘনিয়ে আসছে।
হাদিস শরীফে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের অনেক নিদর্শন বর্ণনা করে গেছেন। তারমধ্যে বেশ কিছু নিদর্শন ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে বা বর্তমানে হচ্ছে। আজ কেয়ামতের কয়েকটি নিদর্শন নিয়ে কিছু বলব-
# নানান ফেতনার দ্রুত আবির্ভাব
বর্তমানকালে হাজারো ফেতনা মুসলমানদের ঘিরে রেখেছে। প্রতিদিন ফেতনাগুলো রঙ-বেরঙয়ের চেহরায় নতুন রূপ নিয়ে আভিভূত হচ্ছে। প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, ম্যাগাজিন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ফলে চোখের ফেতনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। টেলিফোন, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিদিন কত রকমের নিত্যনতুন ভিডিও ফুটেজ অভাবনীয় ডিজাইনে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকার এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহর ভয়ে যে ব্যক্তি ফেতনাসমূহ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে ঈমানের মধুরতা সৃষ্টি করে দেবেন ।
ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য মালের ফেতনা। আজকাল সুদ, ঘুষ, মদ ও হারাম পণ্য ব্যাপক হওয়ার ফলে দ্রুত মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা ছড়িয়ে পড়েছে। হারাম পণ্য রক্ষকের দোয়া আল্লাহ কখনোই কবুল করেন না। পরকালে তার জন্য কঠিন শাস্তির ধমকি রয়েছে।
ফেতনা কালে ঈমান নিয়ে থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে রাখার মত কঠিন হবে। পুরুষ-মহিলা আজকাল একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে হারাম পোশাকের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। প্রতিটি ঈমানদারকে এগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে ।
হযরত আবূ হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত,নবী করীম সা.এরশাদ করেন, অন্ধকার রাত্রির ন্যায় -ফেতনা আচ্ছন্ন হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক আমল করে ফেলো। তখন মানুষ সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় দ্বীন (ইসলাম)-কে সে বিক্রি করে দেবে। (মুসলিম-৩২৮)
হাদিসের মর্মার্থ, অমাবস্যার অন্ধকারের ন্যায় কালো ফেতনা একের পর এক প্রকাশ হতে থাকবে। না বুঝেই মানুষ ফেতনায় পতিত হয়ে যাবে। এমন কাল আসার পূর্বেই নবীজী উম্মতকে বেশি বেশি নেক আমল করে ফেলার আদেশ দিয়েছেন। এ ফেতনার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে, মুহূর্তের মধ্যে মানুষ নিজের অজান্তে ধর্মহীন হয়ে পড়বে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন, আমীন)
# স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আবিষ্কার
লাখো ফেতনার ধারক-বাহক হয়ে পনের হাজারেরও বেশি টিভি চ্যানেল বর্তমানে পৃথিবীর আকাশে ঢেউ খেলছে। অমাবস্যার চেয়েও আঁধার কালো আকৃতিতে পৃথিবীতে আজ ফেতনাসমূহ বর্ধিত হচ্ছে। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বর্তমান স্যাটেলাইটের ফেতনার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ।
হুযায়ফা রা.বলেন, অচিরেই আকাশ থেকে অনিষ্টকর বস্তু বর্ষিত হবে, এমনকি তা জনশূন্য সুদূর মরু প্রান্তরেও পৌঁছবে। হাদিসে ব্যবহৃত- সামা (আকাশ) বলতে মাথার উপর থেকে নিয়ে আসমান পর্যন্ত পুরো মহাশূন্যকেই বুঝায়। আরবি ডিকশনারিগুলোতে তাই উল্লেখ রয়েছে।
আকাশে স্থাপিত প্রায় অর্ধশত স্যাটেলাইট ষ্টেশন থেকে প্রতি সেকেন্ডে লাখো ফেতনা টিভির পর্দা বেয়ে পৃথিবীতে নামছে। বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার জনক ডিশ এন্টেনাকে যদি সুদূর মরু প্রান্তরেও বসিয়ে দেয়া হয়, সহজেই সেখানে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। লোকালয় তো বটেই, আজকাল জনমানবহীন মরুভূমিও ফেতনার শঙ্কামুক্ত নয় ।
# ‘জঙ্গে সিফফীন’ মুসলমানদের আভ্যন্তরীণ সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ
কেয়ামতের নিদর্শনবাহী অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহের ব্যাপারে নবী করীম সা. ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তন্মধ্যে একই কালেমার পতাকাবাহী দু’টি মুসলিম সেনাদলের মধ্যকার ‘সিফফীন’ যুদ্ধের কথা একটু আলাদা করেই বলেছেন। উসমান বিন আফফান রা.-এর হত্যা-ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বের ফলে প্রখ্যাত সাহাবীদ্বয় আলী এবং মুআবিয়া রা.-এর মধ্যে ৩৬ হিজরী সনে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়, যা কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।
আরো পড়ুন: জানাজার নামাজ আদায়ের নিয়ম
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. এরশাদ করেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না একই দাবীর প্রেক্ষিতে মুসলমানদের দু'টি বিশাল বাহিনী তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয় । (বুখারী- ৬৫৩৬/মুসলিম-৭৪৩৮)
তথ্যসূত্র: মহাপ্রলয়, ড.মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আরেফী।
এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/