ছবি: সংগৃহীত
ফ্রিল্যান্সিং বা ঘরে বসে অনলাইনে আয়ের বিষয়টি নতুন প্রজন্মের কাছে এখন তুমুল জনপ্রিয়। আর তাদের টার্গেট করে প্রযুক্তিগত প্রতারণার ফাঁদ পেতে রেখেছে বিদেশি একটি চক্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলেই চোখে পড়ে তাদের লোভনীয় বিজ্ঞাপন। আগ্রহী কেউ বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চক্রের সদস্যরা। কাজ পাওয়ার জন্য শুরুতেই বিশেষ অ্যাপে নিবন্ধন করতে বলা হয়। এর পর ভার্চুয়ালি পণ্য কেনাবেচার বিনিময়ে কমিশন দেওয়ার নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় টাকা। অনলাইনে আয়-প্রত্যাশীরা ভার্চুয়াল ওয়ালেটে কমিশন জমা হতে দেখেন; বাস্তবে কখনোই তা হাতে পান না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চক্রটি প্রথমে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের নামে এ ধরনের প্রতারণা শুরু করে। বিষয়টি অনেকে জেনে যাওয়ায় এখন তারা দারাজ ও ফ্লিপকার্টের নামে একইভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেকার যেমন আছেন; তেমনি আছেন ব্যবসায়ী, শিক্ষক, প্রকৌশলীও। এক স্কুলশিক্ষকই খুইয়েছেন ৫ লাখের কিছু বেশি টাকা। কথিত কমিশনসহ তার ভার্চুয়াল ওয়ালেটে জমেছিল ১৯ লাখ টাকা, যার কিছুই তিনি পাননি। অনলাইনে আয় করতে গিয়ে উল্টো টাকা খুইয়ে আসা এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা দেশে অন্তত পাঁচ হাজার বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।
এ ধরনের কিছু অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে নানা অঙ্কের টাকা খোয়াচ্ছে মানুষ। এর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে ডিবি। প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে সবার সচেতন হওয়া জরুরি।
ডিবি সূত্র জানায়, কয়েকজন চীনা নাগরিক নিজ দেশে বসে এই প্রতারণা চালাচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে। তাদের সহায়তা করছেন সেখানে পড়তে যাওয়া কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। এমন তিন-চারজনের নাম পাওয়া গেছে। এর আগে অ্যামাজনের নামে প্রতারণায় জড়িত চক্রটির সদস্য দুই চীনা নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন জানা যায়, চক্রের হোতা ডেং শোয়াইমিং চীনে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এর পর ঢাকায় চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারা ডিবি কার্যালয়ে এসে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দাবি করেন, প্রতারণায় জড়িতরা চীনা নাগরিক নন। তারা চীনে বসে টাকা হাতিয়ে মিয়ানমারে চলে যান।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইনে আয়প্রত্যাশীদের সঙ্গে দুইভাবে প্রতারণা করে চক্রটি। একটি পক্ষকে প্রথমে ‘কয়েন প্লাস’ বা এ জাতীয় কোনো অ্যাপ ইন্সটল করতে বলা হয়। সেই অ্যাপে নিবন্ধনের পর ভার্চুয়াল ওয়ালেটে ২০ হাজার টাকা রিচার্জ করার নির্দেশনা আসে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (এমএফএস) মাধ্যমে দেশেরই অন্য নম্বরে টাকা পাঠালে তা ওয়ালেটে যোগ হয়। পরে অন্য ভুক্তভোগীদের এই নম্বরগুলোতে টাকা পাঠাতে বলা হয়। এর পর কমিশন পেতে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে ওই টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তর করে চক্রের কাছে পাঠায় অ্যাকাউন্টগুলোর মালিকরা। তবে সেই কমিশন তোলার সৌভাগ্য সবার হয় না। কেউ কেউ প্রথম দিকে অল্প পরিমাণ কমিশন তুলতে পেরেছেন। তবে কমিশনের পরিমাণ বেশি হলেই তাকে ব্লক করে দেওয়া হয়। ফলে তিনি নিজের ওয়ালেটে জমা দেওয়া এবং কমিশন হিসেবে পাওয়া টাকা তুলতে পারেন না।
অন্য পক্ষকে মূলত অ্যামাজন, দারাজ বা ফ্লিপকার্টের পণ্য ভার্চুয়ালি কেনাবেচার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, তাদের বোঝানো হয়, নির্দিষ্ট পণ্য কিনলে সেটি অনলাইন র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাবে। এতে বিক্রি বেশি হওয়ায় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে, আর কমিশন পাবেন ওই ব্যক্তি। কেনাবেচার বিপরীতে ভুক্তভোগীর ওয়ালেটে টাকা জমা হয়। তবে তা কখনোই তোলা যায় না।
আই. কে. জে/