সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন

চালু হচ্ছে একাধিক মেগা প্রকল্প, বদলে যাচ্ছে ঢাকা

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০১:২৫ অপরাহ্ন, ১২ই আগস্ট ২০২৩

#

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে- ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীবাসীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ- মেট্রোরেল অক্টোবরের শেষেই পৌঁছাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। সেপ্টেম্বরে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম পর্ব চালু হচ্ছে। পাশাপাশি চালু হচ্ছে ১৪ লেনের পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। অক্টোবরে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প চালুর কথা রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো চালু হলে রাজধানী ঢাকার চেহারা আগামী দুই মাস পরই বদলে যাবে। যোগাযোগ খাতে আসবে আমূল পরিবর্তন।

আধুনিক ঢাকার অন্যতম গেটওয়ে হিসেবে ধরা হচ্ছে দেশের প্রথম ১৪ লেনের মহাসড়ক পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে নির্মিত নান্দনিক এ সড়ক পথের চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের চিরচেনা অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি দিতে সেপ্টেম্বরেই চালু হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ। মুহূর্তে চলাচল করা যাবে ফার্মগেট থেকে তেজগাঁও হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত।

এছাড়া অক্টোবরেই বিআরটি প্রকল্প আংশিকভাবে চালুর কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। যা দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে। নিশ্চিত করবে ঢাকা-গাজীপুর পথে চলার স্বাচ্ছন্দ্য। দুই মাসের মধ্যে এই মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে শহরের যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হাওয়ার পাশপাশি যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত বিশেষজ্ঞদের।

তবে প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা নিতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, মেট্রোরেল বাদে বাকি প্রকল্পের সুফল পেতে গুরুত্ব দিতে হবে ট্রাফিক ব্যবস্থপনায়। বিশেষ করে এক্সপ্রেসওয়ের ওঠানামার স্থানে ঢেলে সাজাতে হবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এ প্রকল্পগুলো গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ করে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তবে এই যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৩২টি র‌্যাম সড়কের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করবে, এই র‌্যামগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দরকার। কারণ এই র‌্যামগুলোতে যানজটের একটা শঙ্কা থেকেই যায়।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিনের মতে, যানবাহন চলাচলের জন্য যে অবকাঠামো দরকার, ঢাকায় সেটার খুবই অভাব রয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে এর সুফল পেতে হলে ট্রাফিকের ক্ষেত্রে অটোমেশন দরকার। এতে করে খুব তাড়াতাড়ি গাড়িগুলো ডিসপাস হতে পারবে। এ ছাড়া গাড়ি ওঠার সময়ও যেন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, সেটার ব্যবস্থাপনা দরকার। 

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : রাজধানীর যানজট নিরসনে সেপ্টেম্বরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ চালু হবে। রেললাইন ধরে এ উড়াল সড়ক বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে সরাসরি গিয়ে মিলবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে।

জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এই উড়াল সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে।

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে : আধুনিক ঢাকার নতুন গেইটওয়ে হতে যাচ্ছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। দেশের প্রথম ১৪ লেনের মহাসড়ক, যার ৮টি এক্সপ্রেসওয়ে। নান্দনিক এ সড়ক ধরেই তৈরি হচ্ছে পূর্বাচল স্যাটেলাইট সিটির নকশা। মহাসড়কের দুপাশে রয়েছে ১০০ ফুট খাল। রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার পয়েন্ট থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার এ সড়কে থাকছে পাঁচটি এ্যাডগ্রেড ইন্টারসেকশন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে নির্মিত হচ্ছে এ সড়ক পথ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই এ এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিআরটি প্রকল্প : যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। ২০১২ সালে শুরু হওয়া বিআরটি প্রকল্পের অধীন ২০১৬ সালে বিশেষ বাস চালুর কথা ছিল। প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত জোড়া লাগানো আধুনিক বাস চলবে। এসব বাসের পথ হবে সড়কের মাঝখান দিয়ে। যানজট, সংকেত কিংবা অন্য কোনো কারণে কোথাও বাসের চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে না। ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। যার কাজ এখনও চলমান।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আংশিকভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে এক মাস পিছিয়ে অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে। আপাতত শিববাড়ী না হলেও ভোগড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই পথে ২৫টি স্টেশনের মধ্যে প্রথম দফায় ১১টি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১১টি স্টেশনে ৫০টি বাস দিয়ে চালু হবে এই প্রকল্প। আর এই বাস আসবে চাইনিজ কোম্পানি হাইগার থেকে। সব সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে এই প্রকল্পের শতভাগ কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করে পুরোপুরি চলাচল উপযোগী করে ভোগান্তি কমানো যাবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ উদ্বোধন করেন। এরপর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। উত্তরা-আগারগাঁও মেট্রোরেলের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। আগামী অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করবেন।

উত্তরা থেকে মতিঝিল-কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আই. কে. জে/ 

বদলে যাচ্ছে ঢাকা মেগা প্রকল্প

খবরটি শেয়ার করুন