ছবি: সংগৃহীত
নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। দেশের প্রধান এ রেলরুটে বর্তমানে দৈনিক ২৩টি ট্রেন চললেও ডাবল লাইনে উন্নীত হওয়ায় এখন ৭২টি ট্রেন চলতে পারবে। ৩২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুটে যেতে আগে সাড়ে ৫ ঘণ্টা থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগলেও এখন ব্রডগেজে ৪ ঘণ্টা আর মিটারগেজে সাড়ে ৪ ঘণ্টা লাগবে।
ট্রেন গতি ৬০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে মিটারগেজে ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে। আর ব্রডগেজে চলবে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বর্তমানে সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ননস্টপ সার্ভিস দেয়। ট্রেন দুটির যাত্রাপথে লাগে সোয়া পাঁচ ঘণ্টা, সেটি এখন কমে সাড়ে ঘণ্টায় চলাচল করতে পারবে। এছাড়া মহানগর ও চট্টলা এক্সপ্রেসে সাড়ে ৬ ঘণ্টা লাগলেও দেড় ঘণ্টা কমে ৫ ঘণ্টায় চলাচল করতে পারবে। ফলে ট্রেনের যাত্রাপথ কমার সঙ্গে সঙ্গে একটি ট্রেন দিয়ে একাধিকবার চলাচলের সুযোগও তৈরি হয়েছে।
এ রুটে ট্রেন চলাচল বাড়ানো প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৩২১ কিলোমিটার পুরোটাই দুই লেইনে উন্নীত হওয়ায় ৩৬ জোড়া থেকে বেড়ে ৭২ জোড়া ট্রেন চলতে পারবে। দুই লাইন চালু হলে একটি ট্রেনের ক্রসিং দিতে হবে না ফলে ট্রেনের গতি বাড়ানোর মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সময় ও ব্যয় কমবে। রেলও লাভবান হবে।
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে আখাউড়া- লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়। এ প্রকল্পে এডিবি ৫ হাজার ৪৭৭ দশমিক ৮৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয় বিভিন্ন সময়ে পাঁচ বার। পরবর্তীকালে মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়
তবে সময় বাড়লেও সংশোধিত ডিপিপিতে (আরডিপিপি) প্রকল্প ব্যয় কমে হচ্ছে ৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে ৯২১ কোটি টাকা কমতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক সুবক্তগীন বলেন, প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হয়ে গেলেও লুপ লাইনের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। পাশাপাশি ঠিকাদারের এক বছর ডিফেক্ট লায়াবিলিটি ধরে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। প্রকল্পের আওতায় ১৪৪ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ৪০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ, ১৩টি মেজর ও ৪৬টি মাইনর সেতু, ১১টি স্টেশন ভবন নির্মাণ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
আরো পড়ুন:দেশের ইতিহাসে প্রথমবার সংবাদ উপস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘অপরাজিতা
জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানো এখন সময়ের ব্যাপার। ইতিমধ্যে ৪০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় এমনটাই আশা করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ সালে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৬ সালে জুনে রেল উন্নয়নের এ সব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হওয়ায় দেশের মানুষের পছন্দের পরিবহন হয়ে উঠেছে রেল।
এম/