আজ শনিবার (৭ই জুন) দেশজুড়ে উদযাপন করা হবে ত্যাগ ও আনন্দের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপন হয়। ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত অনুসরণ করে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এ দিন কোরবানি দেন।
সারাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও আত্মত্যাগের মহিমায় উদযাপন হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে ঈদুল আজহা শুধু পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি একটি চেতনাশীল ইবাদত—যার মূল শিক্ষা হলো ত্যাগ, আনুগত্য ও মানবিকতা।
ঈদ মানে আনন্দের বাঁধনহারা ঢেউ। ঈদ মানে ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে আপন করে নেওয়া। ঈদ মানে ত্যাগের মহিমায় নিজেকে শাণিত করা। ঈদ আসে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের দেশে ‘কোরবানির ঈদ’ নামে বেশি পরিচিত। কোরবানির পশু কেনা, তার যত্ন ও পরিচর্যাকে ঘিরে থাকে ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ। ঈদের দিন ভোরে উঠে পরিচ্ছন্ন পোশাকে ঈদগাহে যেতে হয়।
ঈদের জামায়াতের পর খুতবায় ইমামরা ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইলের (আ.) কোরবানির অমর ইতিহাস তুলে ধরেন। কোরবানির সুপ্রাচীন ইতিহাসে থাকে আত্মত্যাগের উদাহরণ। সম্মিলিতভাবে দুই রাকাত নামাজ শেষে সবার জন্য থাকে মঙ্গল কামনা করা হয়। ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা থাকে দোয়ায়।
পরস্পরের কোলাকুলিতে ঘটে ভালোবাসার প্রকাশ। ঈদগাহ থেকে ফিরে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন। ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মাংস ভাগ হয়ে যায় আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অসহায়দের মাঝে। পশু কোরবানিই এ ঈদের প্রধান ইবাদত। ঈদের দুইদিন পরও পশু কোরবানি হয়।
ঈদের আগে পশু কেনা, তার পরিচর্যা করার মধ্য দিয়ে যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়, শহুরে জনপদে এবারও তা দেখা যায়। ক্রেতারা হাট থেকে দর-কষাকষি করে পছন্দের পশুটি কিনে গলায় জরির মালা, শিংয়ে রাংতা জড়িয়ে দড়ি ধরে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। ঈদের সপ্তাহ বা ১০ দিন আগে থেকে গবাদি পশু ও পশু খাদ্যের সমাবেশ দেখা যায় পাড়ায় পাড়ায়।
এবার ঈদ এসেছে গ্রীষ্মের একেবারে শেষ প্রান্তে। সাধারণত বর্ষার আগমনের এ সময়ে দেশজুড়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও বানের জলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। এবারও এ শঙ্কা রয়েছে। তবে সব প্রতিকূলতার মধ্যেও মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে আনন্দের রোদ উঠবেই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভেতরের সব পশুত্বকে ত্যাগ করবেন মানুষ। কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য জীবনে কার্যকর করতে মানবিক সাম্য, ত্যাগ ও সহমর্মিতার জয় হবে।
এইচ.এস/