সোমবার, ১লা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপরাধী নেই যে দেশে, নেই জেলখানাও!

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫২ অপরাহ্ন, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশই ক্রমবর্ধমান অপরাধের কারণে উদ্বিগ্ন। আমাদের দেশের অপরাধের হার অনেক উপরে। চুরি, লুটপাট, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন, ডাকাতির মতো সব ঘটনাই প্রতিদিন সামনে আসছে। 

কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি দেশ আছে যেখানে অপরাধ বা অপরাধী নেই। আজকে জানাবো এমনই এক অজানা দেশের তথ্য। এমনকি সেদেশে নেই কোনো জেলখানাও। 

পৃথিবীর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশটির নাম নেদারল্যান্ডস। নেদারল্যান্ডস নামটির আক্ষরিক অর্থ হলো নিম্নভূমি। দেশটিতে বসবাসরত জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি সাগে ৮২ লাখ।

২০২৩ সালে জাতিসংঘের ‘বিশ্ব সুখ’ প্রতিবেদনে দেশটির বিশ্বের  পঞ্চম সর্বোচ্চ সুখী দেশের মর্যাদা দেওয়া হয়, যা দেশটির জীবনযাত্রার উচ্চমানের প্রতিফলন। 

অবাক করা বিষয় হলো, উদারপন্থী দেশটিতে পতিতাবৃত্তি, গর্ভপাত ও যন্ত্রণাহীন স্বেচ্ছামৃত্যু আইনসম্মত কর্মকাণ্ড। ঠিক একইভাবে দেশটি অপরাধীদের জন্যও অনেক উদার। ওই দেশের কর্তৃপক্ষ চান না তাদের জনগণ জেলখানায় বসে থাকুক। এতে নাকি অর্থনীতির উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। এ কারণেই নেদারল্যান্ড তাদের কারাগার বন্ধ করে দেয়।

কয়েকটি কারাগার অবশ্য চালু আছে, তবে সেখানে অন্য দেশের বন্দীরা থাকেন। এই ধরনের অনুপ্রেরণামূলক কৃতিত্বের পেছনের মূল কারণ হলো, নিম্ন কারাভোগের হার একজন নাগরিককে অপরাধের দিক থেকে সরিয়ে আনতে সাহায্য করে। নেদারল্যান্ডস এমন একটি দেশ যেখানে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে তাদের উন্নত জীবনযাপনে সহায়তা করার জন্য তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০২৩ সালে নেদারল্যান্ডসে অপরাধের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশে নেমে আসে।

একদিকে অপরাধের হার কমে যাওয়া দেশের জন্য আনন্দের বিষয়, অন্যদিকে খালি জেল প্রশাসনের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারাগারের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থায় খরচ করা হলেও কোনো কাজে আসছে না। যে কারণে এদেশের অনেক কারাগারকে রেস্টুরেন্টে পরিণত করা হয়েছে। কারাগারের ভেতরে বড় বড় রেস্তোরাঁ খুলেছে এবং সেগুলো চালাচ্ছে প্রশাসন।

এ ছাড়া এখানকার প্রশাসন কারাগারগুলো ভাড়া দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে সরকার। বিদেশ থেকে অপরাধী এনে জেলে ভর্তি করতে চায় যাতে খালি জেল থেকে কিছু আয় হয়। খোদ ইউরোপে, আশেপাশের অনেক দেশে অপরাধের হার অনেক বেশি। এমতাবস্থায় নেদারল্যান্ডসের কারাগারগুলো যদি ভাড়া দেওয়া হয়, তাহলে দুই দেশেরই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এখানকার সরকার কয়েক বছর আগে নরওয়ের সাথে চুক্তি করেছিল এবং নরওয়ে থেকেও এখানে অপরাধীদের পাঠানো হয়।

নেদারল্যান্ডের কারাগারগুলো বেশ হাইটেক। এখানে বন্দিদের জন্য কারাগারের ভেতরেই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা থাকে। এমনকি বন্দীদের রাতে ইন্টারনেটও দেওয়া হয় যাতে তারা ঘুমানোর আগে তাদের পরিবারের সাথে গল্প করতে পারে। আসলে এদেশের জনসংখ্যাও খুবই কম এবং এসব কারণেই এখানে অপরাধের হারও কমছে।

আরও পড়ুন: মানুষের রাগী ও কোমল কণ্ঠ বুঝতে পারে ছাগল!

অপরাধ হ্রাস ছাড়াও এখানে জেল খালি হওয়ার আরও অনেক কারণ রয়েছে। এখানে বেশির ভাগ অপরাধের জন্য ১ থেকে ৩ মাস কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ তিন মাসে জেল খালি হয়ে যায়। এ ছাড়া এখানে অপরাধীদের শাস্তির অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। একজন অপরাধীকে শাস্তি দিতে তাকে দেশের কল্যাণমূলক কাজের সাথে যুক্ত করা হয়। রাস্তা নির্মাণ, সেচ, পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কাজে যেমন অপরাধীরা নিয়োজিত থাকে এবং এটাই তাদের শাস্তি।

নেদারল্যান্ডস তার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে ইলেকট্রনিক ট্যাগিং ব্যবহার করে। পায়ের গোড়ালিতে আটকানো থাকে একটি যন্ত্র। যা ব্যক্তির প্রতিটি কার্যকলাপ রেকর্ড করে। অনেক অপরাধীকে ডিভাইসটি তাদের শরীরের অঙ্গের সঙ্গে লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে জীবন কাটানোর সুযোগ পায়। এভাবে কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের সংস্কারের জন্য একটি ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে নজরদারি করে। 

এছাড়া সেখানকার শিথিল আইন মাদক ব্যবহারের হারও কমাতে সাহায্য করেছে এই ডিভাইজ অতীতের তুলনায়।

নেদারল্যান্ডে পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় একটি স্থান। দেশটিও পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা রেখেছে। টিউলিপের জন্য বিখ্যাত নেদারল্যান্ড। ফুলের মৌসুমে অর্থাৎ বছরের প্রথমদিকে দেশটিতে লাখ লাখ পর্যটক ভিড় জমান বাহারি রঙ্গের টিউলিপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, মিডিয়াম

এসকে/

নেদারল্যান্ডস জেলখানা

খবরটি শেয়ার করুন