প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)
রাজধানীর উত্তরায় রিকশা থামিয়ে দুই যাত্রীকে প্রকাশ্যে দা দিয়ে কুপিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা হয়। সেখানে দেখা গেছে, সাদা ও জলপাই রঙের শার্ট পরিহিত দুই যুবক এক নারী ও এক পুরুষকে দা দিয়ে কোপাচ্ছে। কোপের শিকার ব্যক্তিরা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতংকিত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপটির সদস্যরা উত্তরায় উচ্চশব্দে মোটর সাইকেলের হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রিকশা থেকে ভিকটিম ব্যক্তিরা প্রতিবাদ করায় ২০/২৫ জনের একটি কিশোর গ্যাং জড়ো হয়ে তাদেরকে রামদা দিয়ে কুপিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা উত্তরায় নতুন নয়। মাঝে মধ্যেই ঘটছে। রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় কম-বেশি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য আছে। তবে উত্তরা ও মোহাম্মদপুরকে কিশোর গ্যাংয়ের হট স্পট বলা যায়।
সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অত্যন্ত নাজুক, উত্তরা ও মোহাম্মদপুরের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।বেশকিছু দিন ধরে এসব এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, এমনকি হত্যাকাণ্ডও ঘটছে। এরই ধারাবাহিকতায় কিশোর গ্যাংয়ের এক দুঃসাহসিক অপকর্ম প্রত্যক্ষ করা গেছে।অতিসম্প্রতি মোহাম্মদপুরে দেশীয় চাপাতি নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় পুলিশের চারজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। রায়েরবাজার বোর্ড ঘাট এলাকায় এ হামলার সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত ছিল। কিশোর গ্যাংয়ের ওই গ্রুপটির মূল হোতাকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর গ্রুপটির অন্য সদস্যরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। এদের বিরুদ্ধে এলাকার সচেতন নাগরিকরা রুখে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন।
আরো পড়ুন : মানবপাচারের নির্মমতার শেষ কোথায়?
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। পুলিশের মনোবল ভেঙে যাওয়ায় তাদের অধিকাংশই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছিলেন না। পুলিশের মনোবল কিছুটা ফিরে আসতে শুরু করলেও রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো এখনো সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের অপরাধ কর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এই বার্তাই দিচ্ছে যে, বিশেষত কিশোর গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা না করলে তাদের দমানো সম্ভব হবে না। সরকার ঘোষিত ডেভিড হান্ট চলছে, অথচ এসব অপরাধের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারের উচিত হবে, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।
মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুইজন নিহত ও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। অভিযানে পাঁচজন সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হন তারা। পরে বাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে ছাদের ওপর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
যৌথবাহিনির এমন অভিযান সাধারণ জনগণের মনে স্বস্তি দিবে। অত্যন্ত নির্মোহভাবে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাজধানীবাসীর মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে।
এস/ আই.কে.জে