শুক্রবার, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানবপাচারের নির্মমতার শেষ কোথায়?

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:৪২ অপরাহ্ন, ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

মানবপাচার কোনোভাবেই থামছে না। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই মানবপাচারের নির্মমতার খবর আসছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পথ ব্যবহার করে বাংলাদেশের লোকজন বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। ভাগ্য বদলাতে অনেকে দেশি-বিদেশি মানবপাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হচ্ছেন। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে মানবপাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের নাম বারবার ঘুরেফিরে আসছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আবার নতুন করে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের অমানবিক অপতৎপরতার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনার শিকার ভুক্তভোগী ব্যক্তি  গণমাধ্যমের কাছে তাদের ওপরে চালানো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে সরকারের কাছে প্রতিকার চান। সম্প্রতি লিবিয়ায় কাজ করতে যাওয়া কয়েকজন শ্রমিক সেখানে তাদের ওপর চালানো নানা নির্যাতনের নির্মম কাহিনি গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন।

মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের দোসররা এখন সাধারণত দুই পথে লিবিয়ায় মানুষ পাচারে লিপ্ত রয়েছে। প্রথম রুটটি হচ্ছে- ঢাকা-নেপাল-মিসর-লিবিয়া এবং দ্বিতীয় রুটটি হচ্ছে- ঢাকা- দুবাই-মিসর-লিবিয়া। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে আরেকটি রুটের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটি হচ্ছে, চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। তখন অনেক বাংলাদেশি শ্রমিককে চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার বন-জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর করুণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। 

আরো পড়ুন : বাংলাদেশের ‘বিষফোঁড়া’ দুর্নীতি থেকে মুক্তি চায় সাধারণ মানুষ

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এভাবে মানবপাচারকারী দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার নজির অসংখ্য আছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে। আবার  অনেকের অকাল মৃত্যু ঘটেছে বিদেশের বন-জঙ্গলে কিংবা সলিল সমাধি ঘটেছে ভূমধ্যসাগর কিংবা অন্য কোনো সাগরে। কেউ কেউ টাকা দিতে না পারার কারণে মিথ্যা মামলায় বিদেশের মাটিতে এখনও বছরের পর বছর জেল খাটছে। কিন্তু এরপরও সোনার হরিণের লোভে এই ‘মরণযাত্রা’ থামেনি।বন্ধ হয়নি দেশি-বিদেশি ভয়ংকর দালাল চক্রের অবৈধ কার্যক্রম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ খুঁজতে যাওয়া বিদেশগামীরা নানা ধরনের প্রতারণা এবং ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এরপরও অনেক ভুক্তভোগী ক্ষমতাধর দালালদের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত এবং প্রতারিত  হওয়ার পরেও মামলা করতে উৎসাহী হন না। দালালদের ক্ষমতার দাপট, মামলার রায় পেতে দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানির কারণে  মামলা করেন না।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম জানায়, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪- এই ১০ বছরে শুধু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ বা মারা গেছে ১২ হাজার ৮৪৫ জন। এদের মধ্যে কারোর মৃতদেহ উদ্ধার হলেও পাসপোর্ট না থাকার কারণে তাদের সত্যিকার পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি এ ধরনের মানবপাচার ঠেকাতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগ এবং ইউরোপীয় সীমান্ত ও উপকূল রক্ষী সংস্থা ‘ফ্রন্টেক্স’ যৌথভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ১৪ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। আরো বলা হয়েছে, যত মানুষ লিবিয়ায় যেতে পেরেছে তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, গত বছর দশকের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেছে ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এদের মধ্যে পাচার হয়ে যাওয়া বিভিন্ন বয়সের শিশু ও নারী-পুরুষকে ব্যবহার করা হয়েছে নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। কোথাও আবার নারীদের নিয়োজিত করা হয়েছে পতিতাবৃত্তিতে। এছাড়া ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি এবং খুনের মতো অপরাধমূলক কাজে বাধ্য করা হয়েছে। যাদের বেশিরভাগ মানুষই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।

মানবপাচারের নির্মমতার শেষ কোথায় কেউ জানে না। মানবপাচারের অপরাধের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিক, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

এস/ আই.কে.জে

মানব পাচার

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন