সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদালতে আজ শুধু ভালোবাসার মামলার শুনানি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:০৯ অপরাহ্ন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ফাইল ছবি

প্রতিদিনই আদালতে কত ধরনের মামলারই না শুনানি হয়ে থাকে। তবে বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ দেখা গেছে। 

বুধবার (১৪ই ফেব্রুয়ারি) এ আদালতে কেবল প্রেম-ভালবাসা সংক্রান্ত মামলাগুলোরই শুনানি হবে। 

আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার এ উদ্যোগ নিয়েছেন। আজ এই আদালতে ৩৬টি মামলার শুনানি হবে। আর এসব মামলার সবগুলোই প্রেম-ভালবাসাঘটিত। এদিন শুনানির জন্য আদালতে আসা যুগলদের ‘লাভ ক্যান্ডি’ দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মকবুল হোসেন।

যেসব মামলার শুনানি 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ এ আদালতে যেসব মামলার শুনানি হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মামলা হলো-

কয়েক বছর আগে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার এক কিশোরী (১৭) সনাতন ধর্মের এক যুবকের (২১) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেই সময় ওই কিশোরীর বয়স ছিল ১৪ বছর। সে তখন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিতে পড়ত। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েটির পরিবার এই সম্পর্কের কথা জানতে পারে। এ সম্পর্কে পরিবারের মত না থাকায় মেয়ে ও ছেলে দুজনই একসঙ্গে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। পরে ২০২১ সালের ২০শে জুন তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবার করা অপহরণ মামলায় ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাপাহার উপজেলার ১৬ বছর বয়সী কিশোরী আঁখির (ছদ্মনাম) গত বছর ৯ই জানুয়ারি প্রেমিক পরশের (ছদ্মনাম) কর্মস্থল ময়মনসিংহে পালিয়ে যান। এরপর এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দিয়ে ময়মনসিংহেই একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। ছেলেটি রাজমিস্ত্রির কাজ করত। এরপর ২২শে জানুয়ারি বাড়ি ফিরে আসেন আঁখি। ততদিনে তার বাবা পরশের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর আদালত ওই মামলায় পরশকে কারাগারে পাঠিয়ে আঁখিকে তার পরিবারের জিম্মায় দেন।

পোরশা উপজেলার ১৬ বছর বয়সী রুবাইয়ার (ছদ্মনাম) ২০২২ সালের ৯ই জুলাই প্রেমিক জাহিদের (ছদ্মনাম) সঙ্গে ঘুরতে বের হন। আর এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় রুবাইয়ার। জাহিদ তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় রুবাইয়ার বাবা বাদী হয়ে জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে এ মামলায় পুলিশ প্রেমিক জাহিদকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

সাপাহার উপজেলার ১৭ বছর বয়সী শ্রাবনী (ছদ্মনাম) রবিন্দ্রনাথ সরেনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে ২০২২ সালের ২২শে জুলাই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তাদের পালানোর প্রধান কারণ ছিল শ্রাবনী হিন্দু আর সরেন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী। এছাড়াও শ্রাবনীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেছিল তার পরিবার। ছয়দিন পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এরপর শ্রাবণীর বাবার দায়ের করা অপহরণ মামলায় সরেনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এমনই প্রেম সম্পর্কিত আরও বেশ কয়েকটি মামলার শুনানি হবে আজ এই আদালতে।

আরও পড়ুন: ফুল নিয়ে ওঠা যাবে না মেট্রোরেলে

আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার সকাল ১১টায় এজলাসে বসে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি শুনানিতে উপস্থিত যুগলদের প্রেমে না জড়িয়ে নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসন ও পিতা-মাতার আদেশ মেনে চলা, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।

মকবুল হোসেন বলেন, আজ ভিন্ন মাত্রায় আদালত বসেছে। ট্রাইব্যুনালের অসম প্রেমে জড়ানো ও তা থেকে অভিভাবকদের অপহরণ এবং বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলাগুলো আজ শুনানির জন্য রাখা হয়। বিচারক সংশ্লিষ্টদের পড়াশুনার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধে ও গুরুজনদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলার উপদেশ দেন।

নওগাঁ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, মামলাগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে শুনানি করলে বিচারক মহোদয় সবাইকে একই উপদেশ দিতে পারতেন না। মামলাগুলো একইদিনে শুনানির উদ্যোগ নিয়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এসকে/ 

শুনানি ভালোবাসার মামলা

খবরটি শেয়ার করুন