মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ো না—এনসিপি নেতাদের গোলাম পরওয়ার *** দীপাবলিতে ভারতীয়দের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশি হাইকমিশনের ভিডিও প্রকাশ *** ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিলের তথ্য প্রকাশ, যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা *** ‘জামায়াত ও আ. লীগ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ *** সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও আ.লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান *** সংখ্যালঘুদের বিপদে ফেলবেন না, সরকারকে মির্জা ফখরুল *** বড় পুঁজির স্বপ্ন দেখা শ্রীলঙ্কাকে ২০২ রানে থামাল বাংলাদেশ *** সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা করার নির্দেশ *** নির্বাচনে সেনা এক লাখ, পুলিশ দেড় লাখ ও ছয় লাখ আনসার মাঠে থাকবে *** বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় এনসিপির নিন্দা ও উদ্বেগ

আলতাফ শাহনেওয়াজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:২২ অপরাহ্ন, ২০শে অক্টোবর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

সহকর্মী ও ঢাকা স্ট্রিমের কর্মী স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের আত্মহত্যার প্ররোচনায় অভিযুক্ত কবি ও সাংবাদিক আলতাফ শাহনেওয়াজ (কবি-নাম নির্লিপ্ত নয়ন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার সব প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। আগামী ডিসেম্বর থেকে তার শিক্ষক হিসেবে নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগদানের  বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা প্রায় সম্পন্ন করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ (সংগীত ও নাট্যকলা) বিভাগে তার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে বলে সুখবর ডটকমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগের কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া না হলেও বিশেষ রাজনৈতিক তদবিরের জোরে আলতাফ শাহনেওয়াজ নিয়োগ পাচ্ছেন। তার নিয়োগকে বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের কোটায়। এর মধ্য দিয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে বলে মনে করছেন ঘনিষ্ঠজনেরা। তার শ্বশুরকুলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা আছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রভাবশালী দুই উপদেষ্টার সুপারিশও এবার আছে তার পক্ষে। 

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হওয়ার কথা ছিল তার। পরে তা ব্যাটে-বলে মিলেনি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর বিশেষ স্নেহভাজন আলতাফ তার মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার সুযোগ পেলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তিনি ডানপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর 'বিশেষ লোক'। কবি ও সাংবাদিক হিসেবে তার বেশ পরিচয়-খ্যাতি আছে। তার লেখা সাত-আটটি একক কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। খুঁটিরজোর থাকায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পথে বাধা দেখছেন না সংশ্লিষ্টেরা।

যদিও ভালো ফলাফল নিয়ে নানা চেষ্টা-তদবিরের পরও  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেননি তিনি। সেটা তার দুর্ভাগ্য হিসেবেই দেখছেন আপনজনেরা। অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা স্ট্রিমের গ্রাফিক ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের (২৮) ঝুলন্ত মরদেহ গত শনিবার (১৮ই অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে উদ্ধার করা হয়। সহকর্মীদের ধারণা, যৌন নির্যাতনের বিচার না পেয়ে মানসিক আঘাত ও ক্ষোভ থেকে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তার আত্মহত্যার জন্য দায়ী সাংবাদিক আলতাফকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছে সাংবাদিক সমাজ।

ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরও পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা ছাড়ছেন না কবি আলতাফ। বিশাল বাজেটের অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা স্ট্রিমের তিনি শেয়ার হোল্ডারদের একজন। সংবাদমাধ্যমটির বাংলা বিভাগের প্রধানের (আধেয় সম্পাদক) পদে থাকলেও প্রকল্পটির শুরু তার হাত ধরেই। এতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তিনিই সব বিষয়ে সমন্বয় করেছেন। ঢাকা স্ট্রিমের প্রধান সম্পাদকের পদে গোলাম ইফতেখার মাহমুদ থাকলেও সেখানে আলতাফই সর্বেসর্বা।

আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে গত ১৩ই জুলাই নারী সহকর্মীদের যৌন নিপীড়নের বিষয়ে স্বর্ণময়ী বিশ্বাসসহ ২১ জন নারী সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী লিখিত অভিযোগ করেন প্রধান সম্পাদকের কাছে। এ অভিযোগ জানানোর 'অপরাধে' ৫ নারী গণমাধ্যমকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয় ঢাকা স্ট্রিম থেকে। স্বর্ণময়ীর মরদেহ উদ্ধারের পর সমালোচনার মুখে ঢাকা স্ট্রিমের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগ দাবি করেছে, তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কথিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তিনমাস আগে।

সংবাদমাধ্যমটির সূত্র বলছে, এ দাবি যথাযথ নয়। আলতাফের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা প্রধান সম্পাদক, বা অন্য কোনো বিভাগের কারো নেই। প্রভাবশালী আলতাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার 'অপরাধে' কর্মক্ষেত্রে স্বর্ণময়ীও মৃত্যুর আগে নানা চাপের মুখে ছিলেন। তার মৃত্যুর আগে উত্থাপিত যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ঘিরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পাদকের কাছে আজ সোমবার (২০শে অক্টোবর) একটি খোলা চিঠি পাঠান দেশের পাঁচজন বিশিষ্ট নারী। তারা চিঠিতে ঘটনার সুনির্দিষ্ট তদন্ত ও প্রাতিষ্ঠানিক দায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন। তারা এই মৃত্যুর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন। 

ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, গত বছরে সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা আন্দোলনে নানাভাবে সমর্থন জানানো আলতাফ শাহনেওয়াজ এখন কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন, বিষয়টি স্ববিরোধী। এরপরও তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে থাকায় তাদের অনেকে খুশি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা তিনি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনার সুযোগ পান বিশেষ কোটায়।

নিতান্তই অভাব-অনটনের পরিবারে জন্ম নেওয়া আলতাফ পড়াশোনায় খুব মেধাবী ছিলেন। ঝিনাহদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম ১৯৮১ সালের ২৫শে জুন। বিদ্যালয়, কলেজে পড়াশোনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিত্তবানদের সহযোগিতায়। 

স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যার ঘটনা কেন্দ্র করে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে আলতাফ। সহকর্মীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে প্রতিবাদমুখর, নাগরিক সমাজ ও নারীনেত্রীরা সরব। এর রেশ ধরে কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অর্থায়নে প্রচারণায় আসা ঢাকা স্ট্রিমে চাকরি করেন আলতাফ। তবে অনুসন্ধানে এনসিপির অর্থায়নের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এমনকি সংবাদমাধ্যমটির প্রচার শুরুর আগে বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের দুজন উপদেষ্টা আছেন ঢাকা স্ট্রিমের পেছনে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের যে কোনো একটির এক প্রশাসকের অর্থায়ন ঢাকা স্ট্রিমে আছে বলেও একাধিক সূত্র উল্লেখ করেছে। সংবাদমাধ্যমটির নিজস্ব কার্যালয় ও ভবনের জন্য ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় জমির খোঁজ করছে কর্তৃপক্ষ। বামঘেঁষাদের হাত দিয়ে পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে ঢাকা স্ট্রিম ডান ঘরানার পক্ষে কথা বলবে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের সংবাদ আধেয়তে পেশাদারত্ব ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছে। সংবাদ উপস্থাপনা থেকে অনেক কিছুতেই তারা বেশ পেশাদার।

আলতাফ শাহনেওয়াজ ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করতেন বলে প্রচার করলেও কোন দলের কোন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তা প্রায়ই স্পষ্ট করতেন না। জানা গেছে, সশস্ত্র ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী পূর্ব-বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) নেতা ডা. মিজানুর রহমান টুটুল ছিলেন আলতাফের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী। তার পড়াশোনার খরচের যোগানদাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। অবশ্য দলের কর্মী বানানোর উদ্দেশ্যে তিনি আলতাফকে সহায়তা করেননি। পড়াশোনায় অদম্য মেধাবী ছিলেন বলে আলতাফকে বিশেষ স্নেহ করতেন ডা. টুটুল। ২০০৯ সালের ২৫শে জুলাই র‌্যাবের তথাকথিত ক্রসফায়ারে মারা যান ডা. টুটুল।

আলতাফের আপন এক বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে নিপীড়নের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, বোনের এমন মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়ে তিনি নিজেই হয়ে ওঠেন যৌন নিপীড়ক। তিনি দীর্ঘদিন প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পত্রিকাটিতে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নারী সহকর্মী, বন্ধুসভার নারীকর্মী, কবি যশপ্রার্থী নারীদের যৌন হয়রানি করার কয়েকশ অভিযোগ জমা পড়ে। পত্রিকার এ পদ-পদবিকে আলতাফ বরাবরই যৌন বিকৃতি চর্চার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম মনে করতেন।

আলতাফের শারীরিক ত্রুটি 'বিবেচনায়' প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রথম আলোর আগে তিনি ছিলেন দৈনিক সমকালের সাহিত্য বিভাগে। সেখানেও একই অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সুখবর ডটকমের কাছে অন্তত দশজন নারী কবি অভিযোগ করেন, তারা প্রথম আলোর সাহিত্য বিভাগে ছাপার জন্য কবিতা পাঠালে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ করে তাদের যৌন হররানি করেন, অশ্লীল ইঙ্গিত দেন আলতাফ। কবিতা ছাপানোর বিনিময়ে তার বিছানায় সঙ্গী হওয়ার অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ করেন অন্তত দুজন কবি।

এসব ব্যাপারে আলতাফ শাহনেওয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ পাঠিয়েও কোনো ফিরতি বার্তা মেলেনি। আজ দিনভর ফেসবুক, ই-মেইল, হোয়াইটসঅ্যাপ মাধ্যমে চেষ্টা করেও সুখবর তার বক্তব্য জানতে পারেনি।

আলতাফ শাহনেওয়াজ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250