ছবি: সংগৃহীত
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াতের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ হিসেবে চিত্রিত করাটা জামায়াতের ভয়ংকর মিথ্যাচার বলে কয়েকদিন আগে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, 'এটা ভয়ংকর মিথ্যাচার। ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া মানুষের অধিকাংশই ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। সুতরাং তাদের হত্যাকারীদের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলা মানে ইসলামেরই অবমাননা করা।’
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধবিরোধী আলাপকে যারা ‘ইসলামবিদ্বেষী’ হিসেবে চিত্রিত করেন, তারা ভয়ংকর অপরাধী। যারা ইতিহাস বিকৃত করছে, বৈষম্য–নিপীড়নের রাজনীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
জামায়াত-শিবিরকে উদ্দেশ্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, তাদের বর্তমান তরুণ কর্মীরা একাত্তর সালে জন্মাননি। তারা যুদ্ধাপরাধ করেননি ঠিকই, কিন্তু তারা যদি সেই রাজনীতি ধারণ করেন, তবে সেই অপরাধের দায় থেকে তারাও মুক্ত থাকতে পারেন না। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি যত দিন থাকবে, তত দিন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই চলবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক জামায়াতের বিষয়ে এবার আরো সতর্ক করলেন। তিনি বলেন, একটা কথা বাজারে বেশ চালু করা হয়েছে- ‘আমরা তো আগে আওয়ামী লীগকে দেখেছি, বিএনপিকেও দেখেছি। এই বার জামায়াতকে দেখি।’ এই কথায় তথ্যগত ভুল আছে।
আজ শনিবার (১৮ই অক্টোবর) দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড নয়, তবে সুখবর ডটকম নিশ্চিত হয়েছে, এটি তিনিই পরিচালনা করেন। এবার ‘জামায়াতের শাসন দেখি’ কথাটি বাজারে কে, বা কারা চালু করেছেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, আমরা ‘জামায়াতকে দেখিনি’ কথাটা ঠিক না, একটু খেয়াল করলেই মনে পড়বে, আসলে ভালোভাবেই দেখেছি তাদের। ১৯৭১ সাল তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এই দেশে যখন ভয়ংকর নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালাচ্ছে, তখন তার প্রধান সহযোগী হিসেবে জামায়াত ও তার সব সংগঠনই ক্ষমতা উপভোগ করেছে। অসম্ভব মাত্রায় মানুষের ওপর ভয়ংকর জুলুমে তারা দানবীয় ভূমিকা নিয়েছে। সেজন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের দায় তাদেরও নিতে হবে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আশির দশকে প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্ত হয়। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল, সন্ত্রাসের বহু ঘটনাতেও তাদের ভূমিকা আছে। রতন, কবিরসহ নিহত, রগকাটাসহ হতাহতের বহু ঘটনা তার দৃষ্টান্ত।
এরপর ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আসন ঘাটতির কারণে তাদের সমর্থন দিয়ে ক্ষমতার সহযোগী হয় তারা। যুদ্ধাপরাধের কারণে নাগরিকত্ব হারানো গোলাম আযম জামায়াতের আমির হিসেবে তখনই আত্মপ্রকাশ করেন।’
তিনি বলেন, ১৯৯৫-৯৬ সালে জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ২০০১ সালে আবার বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ক্ষমতায় যায়, দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তখন ছিল তাদের হাতে। তাদের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় র্যাব গঠন হয়, আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়, বাংলা ভাইসহ সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটে, বিচারবহির্ভূত রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড ব্যাপকভাবে শুরু হয় এই সময়...। আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবারই নিজ নিজ কৃতকর্মের দায় নিতে হবে। জামায়াতকেও তাই।’
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা দাবি করছেন, মানুষ বলছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, বাকি শুধু ইসলামি, বা জামায়াতের শাসন দেখার।
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার একাধিকবার দলীয় অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আপনারা বিগত ৫৪ বছরে বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। সেখানে জনগণের কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ সাধিত হয়নি। বিগত সরকারগুলো হত্যা, লুটপাট, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের মাধ্যমে দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দেশের মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, শুধু বাকি রয়েছে ইসলামি শাসন দেখার।'
খবরটি শেয়ার করুন