ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চারদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার (১৪ই মার্চ) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে তিনি এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইফতার করেন। আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় সফর।
এর আগে আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন। সরকারের পক্ষ থেকে তার এবারের সফরকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে প্রচার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা এখন অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। সরকার আশা প্রকাশ করেছিল, আন্তোনিও গুতেরেস শক্তিশালী ও ইতিবাচক বার্তা দেবেন, যা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে সহায়ক হবে।’
জাতিসংঘের মহাসচিবের এ সফরের ফলে রোহিঙ্গা সংকট আবার বৈশ্বিক আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখন পর্যন্ত তিনি কোনো আশার আলো দেখাননি।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অতি তুচ্ছ বিষয় কেন্দ্র করে গোলাগুলি-খুনোখুনির মতো ঘটনা ঘটছে। তাদের মধ্যে অপরাধ-প্রবণতা বেশি। মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের যুগের পর যুগ হত্যা-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে বলে তারা যে কোনো অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করেন না।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থিত ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্যের লড়াই চলছে। অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা কেন্দ্র করেই মূলত বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি, যা অব্যাহত রয়েছে। গত চার বছরের বিভিন্ন সময়ে গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘটিত এসব ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক জন খুন এবং কয়েক হাজার লোক আহত হন।
একটি বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা জনগোষ্ঠীকে পাহারা দিয়ে রাখা নিঃসন্দেহে জটিল এক কাজ। অনেক রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। যেহেতু ক্যাম্প থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারে যুদ্ধ হচ্ছে, তাই সহজেই অনুমান করা যায়, এখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে সেখান থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র আসছে।
আন্তোনিও গুতেরেস এমন এক সময় বাংলাদেশ সফর করছেন, ঠিক এর কয়েকদিন আগে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যা আগামী ১লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেছেন, বর্তমানে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে ১২ দশমিক ৫ ডলার (জনপ্রতি) সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু ১লা এপ্রিল থেকে দেওয়া হবে ৬ ডলার করে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এতে ক্যাম্পগুলোয় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করবে। বিদ্যমান সমস্যার সঙ্গে নতুন করে খাদ্য সংকট যোগ হলে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারণ করবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের কাছে বহুবার জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ কিংবা কোনো বিশ্বনেতা এখন পর্যন্ত এর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। কেউ মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করছেন না। সবাই শুধু বাংলাদেশকে আশার বাণী শোনাচ্ছেন।
বাস্তবিক অর্থেই, বছরের পর বছর ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। জাতিসংঘের সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হলে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য জাতিসংঘের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা খুবই জরুরি।
আন্তোনিও গুতেরেসের এবারের বাংলাদেশ সফরের কারণে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কতদূর এগোবে, সেটাই প্রশ্ন। বাংলাদেশ আশা করে, জাতিসংঘের মহাসচিবের সফরের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যার ফলে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাবেন।
এইচ.এস/