মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ রাষ্ট্রীয় শোক *** সংসদে সংরক্ষিত আসন চায় দলিত সম্প্রদায় *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নরেন্দ্র মোদির শোক *** সাগরিকার হ্যাটট্রিকে নেপালকে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক *** হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার *** নিরীহদের হয়রানি না করতে অনুরোধ গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির *** পাইলট বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেন: আইএসপিআর *** বিসিবির সিদ্ধান্ত বদল, স্টেডিয়ামে খাবার নিয়ে ঢুকতে মানা *** বিমান দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বাঁচলেন অভিনেত্রী সানা

অনন্য মানবিক দৃশ্য

রক্তের আবেদনে হাসপাতালে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন, ২২শে জুলাই ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার (২১শে জুলাই) বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর যখন পুরো দেশ শোক আর আতঙ্কে স্তব্ধ, তখন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে দেখা গেল এক অনন্য মানবিক দৃশ্য—হাজারো মানুষের রক্তদানে ঝাঁপিয়ে পড়া। বিশেষ করে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ছিল অভাবনীয় ভিড়। আহত ব্যক্তিদের রক্তের প্রয়োজন মেটাতে সেখানে তৈরি হয় এক স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশ। হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে শুধু ব্যস্ততা আর ছোটাছুটি।

রক্তের জন্য হাহাকার চলছিল, এরই মধ্যে হাতে হ্যান্ডমাইক নিয়ে একজন তরুণ চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আপনারা যারা রক্ত দিতে চান, দয়া করে লাইন ধরে আসুন। আমাদের ভাই-বোনদের অনেক রক্ত দরকার।’ তার নাম ফারদিন তাহের রাহুল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। একই চিত্র দেখা গেছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনেও।

শত শত মানুষ সেখানে এসেছেন স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে। সেখানেও মাইকিং করে বলা হচ্ছিল, ‘আজকের মতো রক্তের চাহিদা মেটানো গেছে। কিন্তু দয়া করে আপনার নাম, ফোন নম্বর ও রক্তের গ্রুপ দিয়ে যান। পরের দিনগুলোতেও আমাদের আপনাদের দরকার হবে।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেও দাঁড়িয়ে ছিলেন এক তরুণ, হাতে ছোট প্ল্যাকার্ড—‘নেগেটিভ রক্ত লাগবে’। তার নাম রনি। তার কোনো আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি নেই। শুধু মানুষের ডাকে সাড়া দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এই দেশটা আমাদের। এমন সময়ে যদি আমরা পাশে না দাঁড়াই, তাহলে কবে?’

এই স্বেচ্ছাসেবকদের পাশে রয়েছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কর্মী, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা। সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন রক্তদানের জন্য আসা মানুষদের সমন্বয়ে। এই দৃশ্যই প্রমাণ করে—সংকটে দেশের তরুণরাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় ভরসা।

সোমবার রাত সাড়ে দশটা, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে তখন চিৎকার, কান্না, আহাজারি আর রক্তের জন্য আকুতি। সব মিলিয়ে সেখানকার বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠেছিল। জরুরি বিভাগ দিয়ে ভেতরে পা দিতেই চোখে পড়ে উদ্বিগ্ন মুখের সারি। অনেকেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউবা মুঠোফোনে বারবার ফোন করে জানতে চাইছেন প্রিয়জনের খবর। কারও মুখে অশ্রু, কারও চোখে অজানা আতঙ্ক। সবার মুখে মুখে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহ বর্ণনা।

হাসপাতালের বাইরে বের হতেই চোখে পড়ে স্বেচ্ছাসেবী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। কেউ পানি, স্যালাইন, শুকনো খাবার বিতরণ করছেন। হাসপাতালের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা জনসাধারণের প্রবেশ রোধে কাজ করছেন।

রক্ত দিতে আসা মানুষের সংখ্যা তখনো কম নয়। হাসপাতালের এক পাশে দাঁড়িয়ে মাইকিং করে বলা হচ্ছে—‘এই মুহূর্তে রক্তের প্রয়োজন নেই। আপনারা পরে যোগাযোগ করুন।’ তবু কেউ কেউ সরছেন না। দাঁড়িয়ে থাকছেন, হয়তো রক্তের জন্য আবার ডাক আসতে পারে—সেই ভাবনায় অপেক্ষা করছেন তারা। এমনই একজন আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার রক্তের গ্রুপ “ও পজিটিভ”। এখন না লাগুক, পরে তো লাগতেই পারে। বাচ্চাগুলা তো শেষ হয়ে গেল ভাই।’

রাত বাড়ছিল, কিন্তু বার্ন ইনস্টিটিউটের ভেতরে যেন সময় থেমে আছে। একেকটি পরিবার ছুটে চলেছে এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে—প্রিয়জনের খোঁজে। ডাক্তার-নার্সদের চোখেমুখে ক্লান্তি স্পষ্ট, তবু কেউ দম নিচ্ছেন না।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় দগ্ধ ও আহত দেড় শতাধিক রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সিএমএইচ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বার্ন ইনস্টিটিউট, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে।

বিমান বাহিনী বিমান বিধ্বস্ত

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন