ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সুজলা-সুফলা দেশ। একসময় দেশে কাঁঠাল ও আম প্রধান ফল ছিল। এখন প্রায় ২২ প্রজাতির ফল বাংলাদেশের মানুষ নিয়মিত খাচ্ছেন। বিশ্বে কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনেও সপ্তম। এখন জাম, বরই, কামরাঙা, কতবেল, লেবু, আনারস, লটকন, আতা ও সফেদার মতো দেশি ফলের পাশাপাশি স্ট্রবেরি, ড্রাগন, মাল্টা এবং রামবুটান ইত্যাদি বিদেশি ফলের চাষ দেশে ব্যাপক হারে বেড়েছে। এতে বাজারে দেশি-বিদেশি ফলের সমাহার।
প্রতি বছর নতুন ফলের চাষ বাড়ছে। এক দশক আগেও দেশে ৫৬ ধরনের ফল চাষ হতো, এখন ৭২ ধরনের ফল চাষ হচ্ছে। ফল চাষে বৈচিত্র্যের পাশাপাশি নতুন বাজারও তৈরি হয়েছে। রপ্তানি বাড়ছে। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের আম, লিচু এবং পেয়ারা রপ্তানি হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বছরে ১০ শতাংশ হারে ফল চাষ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ, পেয়ারা দ্বিগুণের বেশি, পেঁপে আড়াই গুণ এবং লিচু উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। চার-পাঁচ বছরে নতুন ফল ড্রাগন ও অ্যাভোকাডো এবং দেশি ফল বাতাবিলেবু, তরমুজ, লটকন, আমড়া ও আমলকীর উৎপাদনও বেড়েছে।
আমাদের ছোট দেশ, জমি কম। তবুও বিশ্বের শীর্ষ ১০ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। গত দুই দশক ধরে ফল উৎপাদনে টেকসই ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। একসময় মানুষ বাড়ির আশপাশের ছোট বাগানে সীমিত পরিমাণ ফল উৎপাদন করত। এখন দেশের প্রায় সব অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফলের চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। আগে ড্রাগন ছিল বড় সুপারশপের ফল। বিদেশ থেকে আসা এ ফল দাম বেশি থাকায় কেবল অবস্থাপন্ন ক্রেতারা কিনতেন। এখন ড্রাগন ফুটপাতের দোকান কিংবা ভাসমান ভ্যানেও শোভা পাচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত ১৮ বছরে ফল উৎপাদন গড়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ করে বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের মানুষের ফল বেশি খাওয়ারও তথ্য দিচ্ছে। বিবিএসের খানা জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯৫ দশমিক ৪ গ্রাম ফল খেয়েছেন। ২০১০ সালে এ হার ছিল গড়ে ৪৪ দশমিক ৭ গ্রাম। এর মধ্যে ২০১৬ সালে অবশ্য ফল খাওয়া কমে গিয়েছিল, জনপ্রতি গড়ে ৩৫ দশমিক ৮ গ্রাম।
একসময় বাজারে স্থানীয় ফল তিন মাস বেশি পাওয়া যেতো। মানুষ মে, জুন ও জুলাই মাসের জন্য অপেক্ষা করতেন। এ সময় আম, লিচু, কাঁঠাল ও অন্যান্য ফল বাজারে আসে। দৃশ্যপট এখন পাল্টেছে। অনেক ফল এখন সারা বছর উৎপাদন হয়, বাজারে পাওয়া যায়।
দেশি ফলের উৎপাদন বেশ ভালো। অনেক বিদেশি ফলও এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। তাই বিদেশি ফলের ওপর নির্ভরতা কমছে, আমদানিও কমছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় মৌসুমি ফলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে এবং দামও স্থিতিশীল থাকে।
দেশে আশাব্যঞ্জক হারে বিদেশি ফল উৎপাদন হওয়ায় তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের সঙ্গে সঙ্গে আমদানি নির্ভরতাও কমছে। এ খাতে উৎপাদন বাড়াতে এবং উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে কিছু নীতি-সহায়তা দিতে হবে সরকারকে, এমন অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
খবরটি শেয়ার করুন