সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তরাও, বাড়াতে হবে পণ্যের পরিমাণ

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:০৬ অপরাহ্ন, ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

দীর্ঘ দিন ধরে দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নাস্তানাবুদ। গত নভেম্বর মাসেও দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে প্রায় ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের পেছনে ভোক্তাদের প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কম দামে খাদ্যপণ্য কিনতে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যের পণ্যের পেছনে নিম্ন আয়ের মানুষেরা ছুটছেন। সংকোচ ভুলে মধ্যবিত্তরাও এ কাতারে এসে যোগ দিয়েছেন। কারণ বাজারে চাল, ডাল, তেল, আলুর দাম নাগালের বাইরে কিন্তু চাহিদার বিপরীতে পণ্য বরাদ্দ কম হওয়ায় সবার কপালে জুটছে না টিসিবির পণ্য। টিসিবির ট্রাকের কাছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষকে শেষমেশ খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

রাজধানীর মাত্র ৫০টি পয়েন্টে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অর্থাৎ ট্রাক সেল পরিচালিত হচ্ছে। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দুই লিটার ভোজ্য তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, পাঁচ কেজি চাল ও তিন কেজি আলু কিনতে পারছেন। এসব পণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চাল প্রতি কেজি ৩০ টাকা ও আলু ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এই চার পণ্য কিনতে ক্রেতাকে ৫৯০ টাকা দিতে হচ্ছে। এসব পণ্য খুচরা বাজার থেকে কিনতে লাগে প্রায় এক হাজার টাকা। অর্থাৎ টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারলে প্রায় চারশো টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এজন্যই ট্রাকের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। যেহেতু একজনকে একবারের বেশি দেয়া হয় না, সেহেতু অনেকে আছেন পরিবারের একাধিক লোককে লাইনে দাঁড় করিয়ে অধিক পণ্য কিনে নেন। ফলে অনেক ক্রেতা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
 
ডিলারদের অভিযোগ, তারা মাত্র চারশো জনকে দিতে পারেন। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি। কেবল নিম্নবিত্তরাই নয়, মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এতে চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সবাই পণ্য চায়, কিন্তু আমাদের তো পরিমাণ সীমিত। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পণ্য পেতে লাইনে হুড়াহুড়ির মধ্যে প্রায় সময়ই গণ্ডগোল বেঁধে যায়। সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পণ্য ফুরিয়ে গেলে যারা পায় না, অনেক সময় তারা ট্রাকের উপর হামলা করে। এলাকার কিশোর গ্যাং এসেও মাঝে-মধ্যে ঝামেলা করে। হুমকি-ধমকিও দেয়।

আগে একটা সময় ট্রাকের পিছনে কেবল গৃহকর্মী, রিকশাচালক ও দিনমজুরদের উপস্থিতিই বেশি ছিল। তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীদেরও লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। এতদিন যারা লাজলজ্জার কারণে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়াননি, তারাও সংসারের খরচ বাঁচানোর জন্য টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকে মনে করেছিল নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমবে। হয়েছে উল্টোটা। প্রতিদিনই পণ্যের দাম বেড়ে চলছে। সিন্ডিকেট তো ভাঙতে পারেনি,বরং নতুন নতুন সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এসব কারণে টিসিবির ট্রাকের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে রয়েছেন, তাদের পাশাপাশি স্বল্প, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা এসে সারিতে দাঁড়াচ্ছেন।

টিসিবি পণ্যের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে মানুষ টিসিবির ট্রাকের পিছু পিছু ছুটছেন। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মলিন মুখ। যাদের সিংহভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত টিসিবির পণ্য বিক্রির আওতা বাড়াতে হবে।

আই.কে.জে/

টিসিবির লাইন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন